Skip to main content

Posts

Featured Post

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠিয়েছিলেন র
Recent posts

নিম্নচাপ

  উ ত্তর পূর্ব থেকে হাওয়া দিচ্ছে। নিম্নচাপের বৃষ্টি ঢুকে পড়ছে জানলা দিয়ে ঘরে। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দু' একজন ফেরিওয়ালা কচিৎ হেঁকে যাচ্ছেন। বর্ষাতি পরে ছেলেমেয়েরা টিউশন নিতে গেল। রাস্তার জমা জল ছেটাচ্ছে মজায়।  এমন দিন ছেলেবেলারই।  ফুটবলের।  পুকুর ঝাঁপানোর। জলখেলার। ঠান্ডা জল সর্বাঙ্গে। ডুব দিলে বৃষ্টির নিক্কণ।  আঃ! আমাদের তখন ছোট বাড়ি। বৃষ্টি এলেই ছাদে ঝমঝম শব্দ ফোটে। কার যেন বাগান কেটে ছোট ছোট প্লট। জমির সীমানা নির্ধারক পিলার মাটি থেকে একটু করে মাথা তুলে যেন চারপাশ থেকে মালিকের জমি আলাদা করে রাখে।  বেশিরভাগ জমিই তখন ফাঁকা। এমন নিম্নচাপের দিনে পুকুর ভেসে যায়। কই মাছ উঠোনে হাঁটে। হাম্বার সাইকেলে চেপে বাবা অফিস চলে গেলেই দুনিয়া আমার। বাড়ির পাশে জমা জল। জলের নিচে ঘাস। পাঁচিল থেকে ভূমধ্যসাগরে লাফিয়েছি। হাতে বাতার তলোয়ার।  ওপাশ থেকে পার্থ লাফিয়েছে। দেবাশীষ এসেছে। হাতে লোহার পাইপ বাঁকানো বন্দুক। তিনদিক থেকে জলদস্যুদের আক্রমণ। ভুমধ্যসাগর আগাপাশতলা আন্দোলিত। ফেনার ঢেউ উঠছে। আক্ষরিক অর্থে কচু কাটা হচ্ছে নবীন কচুবন। ফড়িং এর দল হেলিকপ্টার চড়ে পালাচ্ছে। প্রাণ হাতে নিয়ে ব্যাঙ লাফা

ব্যস্ততার বিলাসিতা

  বৃষ্টি এলো। তখন সকাল সাড়ে দশটা হবে । জানলার পাল্লা গুলো বন্ধ করলাম । জানলার পাশে বসেছি। গা ভর্তি আলসেমি। হঠাৎ জানালার বাইরে বকবকম। ঘষা কাচে তাকিয়ে দেখি কার্নিশে দুটো পায়রা এসে বসেছে । জবজবে ভিজে। ডানা থেকে জল ঝরছে। একজন বসে আছে চুপ করে। অন্যজন ওই অতটুকু জায়গায় ব্যস্ত হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। কত কথা তার। খানিক বাদে চলে গেল দুজনেই। জানলা খুলে দিলাম। বাইরের কদম গাছটা রোজই দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ পড়ে না। আজ তাকিয়ে দেখি নরম বলের মত কদম ফুটেছে। কাঠবেড়ালি কদমের ডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। ভিজে হাওয়া রীতিমতো থাপ্পড় কষিয়ে বলে গেল পাশাপাশি থাকো অথচ চোখ মেল না? বেড়াতে যাওয়া হলো না বলে মুষড়ে থাকো, অথচ একবারও বাইরে দেখ না। আরে এই শহরেও সব আছে। ব্যস্ততার বিলাসিতা ছেড়ে আবার তাকাতে শেখো। ছাদে অপরাজিতায় সাদা ফুল এসেছে, তুলসীর মঞ্জরিতে, সিমের কচি ফুলে প্রজাপতি এসে বসছে। প্রজাপতির মন খারাপ নেই। গ্রামের ফুলে বসবো, এখানে বসবো না এ সব ছেঁদো কথা বলে বলে মাথা কুটছে না । দেখো করবীতে আরেকটা রং এসেছে। ভাঙা বালতিতে শিকড় ছড়িয়েছে বলে অভিমানে ফুল ফোটাব না বলেনি। পাশের ঘরে বাবু পড়ছে । আমার আজ কাজ নেই। ছাদ

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত করেছে। চ

নতজানু হয়ে শিখে চলি

  “এত বিদ্রোহ কখনও দেখেনি কেউ দিকে দিকে ওঠে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ” ঢেউই বটে। স্বতঃস্ফূর্ত যে ঢেউ আছড়ে পড়ছে ক্রমাগত- কার সাধ্য তার পথ আটকায়! ঘৃণ্য, মনুষ্যেতর ঘটনা ঘটেছে এই শহর কলকাতার বুকে- ঐতিহ্যশালী সরকারি হাসপাতাল আর.জি.করে-এ। এক টানা ছত্রিশ ঘন্টা সেবা প্রদানের পর কর্মক্ষেত্রেই ধর্ষিতা হয়ে খুন হতে হয়েছে চিকিৎসক তিলোত্তমাকে। এই জোরালো আঘাত নাড়িয়ে দিয়েছে মানুষের মন। দীর্ঘদিন এই মন আবদ্ধ ছিল। আবদ্ধ ছিল নানান বাঁধনে। হতে পারে তা আপাত কর্মব্যস্ততা, হতে পারে বিভ্রান্তি, হতে পারে জীবিকা অর্জন, হতে পারে ভীতি, হতে পারে লোভ, হতে পারে উদাসীনতা, হতে পারে পলায়নপ্রিয়তা, হতে পারে আরও অনেক কিছু। মোদ্দা কথা, সমাজের মন বদ্ধ ছিল। এই ভয়ানক ঘটনা সেই বাঁধন খুলে দিল। কোনো মেয়ে সুরক্ষিত নয়। কেউ সুরক্ষিত নন। আইন, নিয়ম সব আছে। কিন্তু নীতিহীনতা, মনুষ্যত্বহীনতা, ক্ষমতার দাপট সেই সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। অস্তিত্বের টান বড় টান। মরমে আঘাত বড় আঘাত। সেই আঘাত নেমে আসল তিলোত্তমা হয়ে পশ্চিমবাংলার সমস্ত মানুষের মনে, প্রধানত নারী মানসে। বহুদিন পর স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখল সমাজ। স্বীকার করতেই হবে- নারী পরিচালিত আন্দোলন

আজ আমাদের নেড়াপোড়া

আজ আমাদের নেড়াপোড়া শাশ্বত কর    ইশকুল ছুটি হল কি না হল দুদ্দাড় করে দৌড়। দলের সব্বাই! দৌড়তেই হবে। নইলে অন্য দল যে নিয়ে নেবে। শেষমেশ হারতে হবে নাকি! নৈব নৈব চ! কাজেই ছুট। ছুটতে ছুটতেই হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, মানে সুপুরির পাতা, তালের ডগা, নারকেলের ডাগা- কুড়িয়ে নিয়ে ছুট! ভাঙা ভাঙা পিচের রাস্তা। শুকনো পাতার ঘষায় তার গয়না আলগা। কুচি পাথর পাতার টানে নড়নড়িয়ে এগিয়ে চলে। ধুলো ওড়ে। উড়ুক গে। আগে তো পাড়ায় পৌঁছোই, তারপর ভৌমিকদের ভিতের গর্তে এগুলো ডাঁই করতে হবে। ওটাই এবারের গুদাম। গুদামে মাল জমা চলছে গত সপ্তাদুয়েক। মন ভরছে না। আজ শেষদিন। বাড়ি গিয়েই তাই বস্তা নিয়ে বেরোনো হবে কুচো পাতা একাট্ঠা করতে। তাই হল। দলে পাঁচজন। দুটো বস্তা। একটা ভরতে হবে বাঁশপাতায়। কাজেই যেতে হবে ক্যাটাইবুড়োর বেগুন খেত পেরিয়ে মিত্রবাড়ি। বাড়ি বলে বাড়ি! যেমন বড় কবি, তেমনি বড় তাঁর মামার বাড়ি! যেমন ছন্দের যাদুকর, তেমনি ছন্দ ভরা বাগান! বাগানের ভিতর দিয়ে আমাদের ইশকুল যাবার শর্টকাট। গাছ আর  গাছ! শাল সেগুন শিমুল অশোক। একপাশে বাঁশের ঝাড়। সারাক্ষণ সরসর সরসর হাওয়া।  সেখানে পৌঁছেই বাঁশপাতা কুড়োতে শুরু করে দিল বুড়ন আর মিলু। বুকু আর মান্ত

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিলাম পুঁতে। নতুন ভোরে খোলস ছেড়ে বেরি