Skip to main content

অহনা আলোর পথযাত্রী- এখানে থামবে না

  





অহনা - The Light Within


ওই শেষের কথাটিই ছবির সুর। মন ছোঁয়া সুর। লালন সাঁই এর গানে মায়াময় এক দৃশ্য মিশে যাচ্ছে। উত্তরণ। উত্তরণের অভিযাত্রা। মানুষের পরিচয় মানুষ। নারীবাদিতার ট্যাগ আঁটলে এ ছবির সাথে খানিক অনুচিত হবে বলেই এই সামান্য কলমচির অভিমত।


কথা বলছিলাম প্রমিতা ভৌমিক লিখিত, পরিচালিত, প্রযোজিত ছবি 'অহনা' নিয়ে। অভিধান বলছে অহনা শব্দের অর্থ উষা, দিনের প্রারম্ভ, উজ্জ্বল। আর ছবি বলছে অহনার ভিতরের রাত কেটে ভোরের কাছে যাওয়ার গল্প। গল্প চেনা। আশপাশে তাকালে- আশপাশে কেন পরিবারে তাকালেই চোখে পড়বে এমন গল্প। গল্প বলা- স্পয়লার দেওয়া আমার কাজ না। কাজেই দিলাম না। কেবল এটুকু বলি অহনা সমাজের সংবেদনশীল এক মেয়ে। লেখক। লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক। অধ্যাপক স্বামী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শ্বশুর আর কাজের মানুষ নিয়ে গোছানো সংসার তাঁর। অন্তত বাইরে থেকে তো তেমনই মনে করা যায়। খুব ভুলও নয়। না , এটা বলাই আমার ভুল হলো- সংসারের, পরিবারের ভিত যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা- অহনা আর তাঁর অধ্যাপক বরের মধ্যে সেইটিরই অভাব। বড় অভাব। অভাবের কারণ অবশ্য লুকিয়ে শরীর ছুঁয়ে মনে। সমাজ ছুঁয়ে মনে। দ্বন্দ্ব ছুঁয়ে সম্পর্কে- অশ্রদ্ধায়। বলছিলাম না চেনা গল্প। গল্প চেনা বলে সুখ দুঃখও আমাদের চেনা। সম্পর্কে কাউকে ছোট করা চেনা, সম্পর্কে পরশ্রীকাতরতা চেনা, সম্পর্কে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স চেনা, সম্পর্কে মিথ্যে কথা চেনা, সম্পর্কে খোঁটা দেওয়া চেনা, সম্পর্কে রোজগারের- শেষ অবধি প্রতিপালনের খাওয়ানোর- সোজা কথায় ভাত কাপড়ের খোঁটা দেওয়া চেনা, সম্পর্কে দমবন্ধ হওয়া চেনা। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হলেও চেনা। চেনা না কেবল অহনার রেজলিউশান- ছবির শেষে মানুষের মানুষ পরিচয়ের বার্তা- একক মাতৃত্বের বার্তা। চেনা গল্পকে এমন করে অচেনা মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার মুনসিয়ানা দেখিয়েছেন পরিচালক। 


পরিচালক প্রমিতা ভৌমিক সুকবি, সুলেখক। তাঁর কবিতায়, লেখায় যে স্নিগ্ধতা ঘুরে বেড়ায় জীবনের কঠিন অলিন্দে তেমনই এক স্নিগ্ধতা এই কঠোর বাস্তব ছবিতেও ফল্গুর মত বয়েছে। অনবদ্য কিছু ফ্রেম সেই ধারার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেবেই।


শুরুতেই বলেছি নারীকেন্দ্রিক গল্প হলেও প্রোটাগনিস্ট অহনা অথবা গোটা ছবিটিতে নারীবাদিতার ছাপ দেওয়াতে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে তার বেশ কিছু কারণের মধ্যে একটা অন্তত বলি- অহনাকে ঘিরে গল্প বুনোট বেঁধেছে আরও তিনজন পুরুষ নিয়ে- তাঁদের একজন অবশ্যই অহনার অধ্যাপক বর, আর একজন বরের বাবা- অহনার পারিবারিক কাছের মানুষ তাঁর শ্বশুর মশাই, আর একজন অহনার সাইকোলজিস্ট বন্ধু। এই দুই পুরুষের সাপোর্টিভ ক্যারেক্টার যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক সেখানে তো নারীবাদিতার নাম গন্ধ নেই। 


বৈষম্য পেরিয়ে স্বচ্ছতার কাছে যাওয়ার বার্তা আছে এই ছবিতে। দমবন্ধ অন্ধকার, সম্পর্কের দমবন্ধ দ্বন্দ্ব- কুয়াশা পার হয়ে আলোর কাছে এগিয়ে যাওয়ার কথা আছে এই ছবিতে।



এমন শক্ত বিষয় সহজ করে আঁকার মুন্সিয়ানা আছে এই ছবিতে। সুদীপ্তা চক্রবর্তী, জয় সেনগুপ্ত, সৌম্য সেনগুপ্ত, প্রিয়ব্রত সহ আরও অনেকের অপূর্ব অভিনয় আছে ছবিতে। সম্পর্ক, সমাজ, চাওয়া, পাওয়া সব ছুঁয়ে যে আলো নিজের ভিতর ঘরটাকে আলো আলো করে রাখে তাঁর কাছে যাওয়ার কথা আছে এই ছবিতে। অনবদ্য সিনেমাটোগ্রাফি আছে এই ছবিতে।  প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতেই নিজেকে ব্যক্ত করার অপূর্ব ক্ষমতার স্ফূরণ আছে ছবিতে।


এমন ভালো ছবি সহজে মেলে না। চেনা গল্প জানা সুখের বৃত্তে আলোর কাছাকাছি যেতে দেখে আসতেই পারেন।


- শাশ্বত কর 

Comments

Popular posts from this blog

যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ !

  স ত্যিই যুদ্ধ। যুদ্ধ বলে যুদ্ধ! চোখের সামনে যুদ্ধ, নায়কে খলনায়কে যুদ্ধ, দেশে দেশে যুদ্ধ, গানে Gun-এ যুদ্ধ, কানে কানে যুদ্ধ, মনে মনে যুদ্ধ। ধিম ধুম ধাসুম গুদুম গাদুম - বোম পড়ছে, গ্রেনেড পড়ছে , বাড়ি উড়ছে, গাড়ি উল্টচ্ছে, গাড়ি গুঁতোচ্ছে , হেলিকপ্টার উড়ছে, জেট উড়ছে, জেড নিরাপত্তা বুড়ো আঙুল দেখছে, আঙুল চুষতে চুষতে চোর ঠেঙান ঠেঙাচ্ছে হিরো - সব কুছ আরামসে! আরি বাপরি বাপরি বাপ! ওয়ান ম্যান আর্মি - আরি বাপরি বাপরি বাপ!  পুরো বিনোদনের ক্যাপসুল! ক্যাপসুলে কি নেই? তিন ঘন্টার মধ্যে জগত দর্শন! ওরে বাপরে মার কাকে বলে? অবশ্য শুধু মার বললে ভুল হবে। প্রেমের জোয়ার আছে, প্রেমের জোয়ারে দোহার ভেসে যাওয়া আছে। স্পাই ভার্স বলে কথা- কাজেই সুন্দরী নায়িকার স্বল্প বসনে হাঁটাচলার আবেদন আছে, মনে ঢেউ তোলা নাচন আছে। আর সর্বোপরি- গ্রিক গড হৃত্বিক রোশনের নাচ আছে! আর কি চাই? দীপিকা?  পুরো ছবিটাতেই তো হৃতিক রোশন আর হৃতিক রোশন! অবশ্য এন. টি. আর. তাঁর কামাল দেখিয়েছেন। হৃতিকের পাশে নাচার সময় চোখে পড়ে এমন মানুষ বলিউডে এখনও খুব কমই আছেন। এন. টি. আর তাদের একজন। ছবিতে হৃতিকের সাথে প্রায় সমান...

গৃহপ্রবেশ- ভালোবাসার ঘর দুয়ার

 শাশ্বত কর  গরম কোন পর্যায়ে সে তো আর বলা না বলার ধার ধরে না। ঘামে ঘামে বাসে ট্রামে সবাই টের পাচ্ছে। একটা কাজে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ঘণ্টা চারেকের অবসর পেয়ে গেলাম। অবসর বটে কিন্তু চাআআর ঘণ্টা এই তুমুল রোদে করি কী? সময় বদলেছে। এমন প্রখর দাবদাহে পথিক কি খুঁজতেন? খানিক গাছের ছায়া, তৃষ্ণার জল- এই তো!  আমার কাঁধের ব্যাগে জল, নাকের ডগায় মাস্ক, মাথায় কপালে রোদ্দুরের তেজে গলন্ত স্বেদ। মাথা চিড়বিড় করছে, পেতে ছুঁচো না হোক কেউ তো ডন দিচ্ছে। এই তুমুল আলোয় সত্যি সত্যি চোখে ঝিলমিল লেগে যাচেছ। সামনে অজস্র খাবারের দোকান, চায়ের দোকান। সেসব ছেড়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে খোলা মাঠ দেখে সময় কাটাব ভাবছিলাম। চোখে মুখে রোদেল হাওয়ার কঠিন চুম্বনএর ঠেলায় সইলো না! বেরিয়ে এলাম। দক্ষিণ কলকাতার ফুটপাথ। গাছের ছায়ার অভাব নেই, অভাব নেই রোদের দীর্ঘশ্বাসেরও! খানিক উদভ্রান্ত পায়চারির মধ্যেই মরূদ্যানের মত একটা সিনেমা হল। আর পায় কে? টিকেট উইন্ডোতে টিকিটের দাম দেখে খানিক আশ্বস্ত হলাম। এখনো ১১২ টাকায় সিনেমা দেখা যেতে পারে !এই দুপুর রোদে ১১২ টাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসার আরাম। এই ভয়ঙ্কর আশ্র...