Skip to main content

দ্য রয়াল ড্রিম ব্লোয়ার, রোয়াল্ড ডালের ভাল দৈত্যের গল্প






দ্য রয়াল ড্রিম ব্লোয়ার
শাশ্বত কর

এই নামেই কিন্তু শেষ অবধি ডাকতে ইচ্ছে করবে তাকে যদিও সে এক মস্ত দৈত্য! যদিও সে নিশুত রাতে আবছা জোছনার সড়ক পথে মস্ত কালো ছায়া! যদিও তার হাতে তখন ধামসা সুটকেস আর ছিপছিপে ট্রাম্পেট! যদিও তার কারনামা দেখে ফেললে সে ছোট্ট বাচ্চাকেও রেয়াত করে না! যেমন তেমন করে ধরে নিয়ে যায়, তবুও!

যেমন নিয়েছিল ছোট্ট সোনা সোফিকে! দোষ কি ছিল তার? কিচ্ছু না! কেবল চাঁদের আলোয় ঘুম না আসায় জানালার পর্দা আটকাতে গিয়ে দেখে ফেলেছিল! তাই বলে অমন করে রাত পোশাকেই কম্বল পেঁচিয়ে ধা! ধা বলে ধা! সে এমন ছুট যে হাওয়ায় মাথা বেঁকে যায়, চারপাশ ব্লার্ড! এক এক লাফে ডজন নদী, চওড়া জঙ্গল, তেপান্তর পার! ছুটতে ছুটতে ভোরের সময় এক ঊষর দেশ! সেখানে গাছ নেই, বাড়ি নেই, কেবল ফাটল ধরা পাহাড়! সেখানে মাটির নিচে অন্ধকার গুহা! গুহার মুখে মস্ত পাথরের আগল! সে কিনা দু আঙুলে সোফিকে তুলে বসিয়ে দিলে দৈত্যাকার এক টেবিলে! সোফি তো শেষ! এই বুঝি গপ করে গিলেই ফেলল দৈত্য!

কিন্তু এ দৈত্য তো সে দৈত্য নয় এ যে বন্ধু, ভাল! ভাবছ, দৈত্য কি আবার ভাল হয়? কেন হয় না? অস্কার ওয়াইল্ড তো আমাদের চিনিয়ে গেছেন- সেই যে, সেই স্বার্থপর দৈত্য! সেই সেলফিশ জায়াণ্ট যখন দেবশিশুর আঙুল ধরে স্বর্গের বাগানে, আর তার নিজের বাগে সাদা ফুলে ফুলে ঢাকা তাঁর নিথর দেহটা, জল আসেনি চোখে? ভাল না হলে বুঝি তার জন্যে কাঁদা যায়!

এ ও সেই রকমই ভাল, বন্ধু দৈত্য- নাম হলদ্য বিগ ফ্রেইন্ডলি জায়াণ্ট’, আদর করেবি.এফ.জি.’ সোফির দুঃখের কথায় তার দুই চোখ ভেসে যায় জলে সোফি যে অনাথ( দৈত্য ভাষায়- নরফ্যান)! অরফ্যানেজের মালকিন এতটাই কড়া যে রাতে আলো নেভার পর বাথরুমে গেলেও সারা দিন না খাইয়ে গুমঘরে আটকে রাখেন বাচ্চাদের এই দুর্দশায় বি.এফ.জি.র সে কি দুঃখ! সে কি রাগ! এই বন্ধু দৈত্যের কিন্তু অনেক গুণ! যেমন ধর দুর্বার গতি! সে অবশ্য আর সব জায়ান্টেরও থাকে! তারপর ধর অসাধারণ শ্রবণ ক্ষমতা! লম্বা দুটো কুলোর মতন কান, যে দিকে খুশি ঘুরতে পারে, ভিতরে বাইরে যেতে পারে! চন্দ্র সূর্যের গান থেকে শুরু করে পিঁপড়ে দম্পতির ঝগড়া পর্যন্ত সব শুনতে পারে এমন কি স্বপ্নরাজ্যে স্বপ্ন প্রাণির নিঃশব্দ চলাচল- তাও শুনতে পারে!

ও মা! সে কথা তো এখনও বলিই নি! এটাই তো বি.এফ.জি.র সবচে বড় খাসিয়াত সোফিও দেখেছে ওকে নিয়ে বি.এফ.জি. তো গেছিলও স্বপ্নের দেশে! আহা! কি তার বর্ণণা! সত্যিই স্বপ্নের দেশ সেখানে কুয়াশার মধ্যে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে বি.এফ.জি. স্বপ্ন ধরা নেটে লাফিয়ে ধরে স্বপ্ন প্রাণি, সোফির বাড়িয়ে দেওয়া বোতলে ভরে রাখে এমন বহু স্বপ্ন রাখা তার গুহার সেলফে! গায়ে লেবেল সাঁটা ও তো আসলে স্বপ্নের দূত রাত্রি বেলা ঘুমন্ত শিশুর কাছে ওই ট্রাম্পেটে স্বপ্ন ভরে এক ফুঁয়ে পৌঁছে দেয়! মজার মজার সব স্বপ্ন! আবার নাইটমেয়ারও আছে!

তবে এত মজার মাঝেও কিন্তু ভয় আছে কারণ দৈত্য রাজ্যে একমাত্র সেই মানুষ খায় না বাকিরা সবাই সাপারে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মানুষ খায় সৎ বি.এফ.জি. খায় স্নুজকাম্বার- চিচিঙ্গার মত দেখতে অতি জঘন্য স্বাদের এক সবজি সে যাই হোক, এমন ভয়ানক স্থানে বিপদে তো পড়বেই সোফি আর সঙ্গে যখন বি.এফ.জি., তখন দুয়ে মিলে প্ল্যান ছকে উদ্ধারও পাবে সেটাই তো কাহিনি! সেখানেও পরতে পরতে মিশে স্বপ্ন আর সে স্বপ্নকথাই তো আমাদের শুনিয়েছেন রোয়াল্ড ডাল (Roald Dahl), তাঁরদ্য বি.এফ.জি.(The BFG)’ বইয়ে

পাফিন বুকস (Puffin Books) থেকে বইটা বেরোয় ১৯৮৪ তে, তার  আগে অবশ্য গ্রেট ব্রিটেনে জোনাথন কেপ লিমিটেডের সৌজন্যে ১৯৮২তেই প্রকাশিত উৎসর্গের মানুষটিও সোফির মতন ছোট্ট এক মেয়ে- অলিভিয়া (Olivia), এই পৃথিবীতে যাঁর আয়ুস্কাল মাত্র সাত বছর( ২০ এপ্রিল,১৯৫৫- ১৭ নভ,১৯৬২)! বইখানা আগাগোড়া স্বপ্নের শুরুতেই চরিত্রলিপি- জন মানুষ আর দশজন দৈত্য- দেখেই পড়তে ইচ্ছে করবে কতসব নাম দৈত্যদেরঃ ফ্লেশলাম্পইটার, বোনক্রাঞ্চার, ম্যানহাগার, চাইল্ডচিউয়ার, মিটড্রিপার, গিজার্ডগাল্পার, মেইডম্যাশার, ব্লাডবটলার, বুচারবয়!

বইটার সম্পদ বি.এফ.জি. আর সোফির সংলাপ কী অসাধারণ দক্ষতা রোয়াল্ডের সোজা সেঁধিয়ে যেতে পারেন শিশুরাজ্যে! বি.এফ.জি.র জন্যে কত সহজে জন্ম দিতে পারেন নতুন ভাষা, ভোক্যাবুলারি! বি.এফ.জি. কে দিয়ে কেমন অনায়াসে বলিয়ে নিতে পারেন, ‘দৈত্যরা যতি ভয়ানক হোক, একে অন্যকে খায় না, কিন্তু মানুষ পরস্পরকে খায়অথবাসব প্রাণি নিজের মত নিয়ম তৈরি করে, সে নিয়ম মানে কিন্তু নিয়ম ভাঙে কেবল মানুষ বি.এফ.জি. আসলে ভয় পায় মানুষকে সোফি তার ভয় দূর করতে পারে শেষ পর্যন্ত বি.এফ.জি.র ঠাঁই হয় বাকিংহাম প্যালেসের পাশে বিশাল এক বাড়িতে, আর সোফির নতুন কটেজের ঠিক লাগোয়া জায়গায়

একটা কথা এখনও বলা হল না! কোয়েন্টিন ব্লেকের (Quentin Blake)কথা তিনিও এক যাদুকর যাদু তাঁর তুলির ডগায় এমন সব ইলাস্ট্রেশান করেছেন গোটা বইটা জুড়ে যে, বলাই যায় এই ছবি ছাড়া বইটা অসম্পূর্ণ রোয়াল্ডের কথায় আর কোয়েন্টিনের তুলির যুগলবন্দিতে স্বপ্ন উড়েছে পাতায় পাতায়

অবশ্য আরেকটা চমক আছে একদম শেষে বলব না মজা মিলিয়ে যাবে তাহলে একটু হিন্ট দিই শুধু- বি.এফ.জি. ব্রিটেনে এসে লেখাপড়া শিখেছিল চার্লস ডিকেন্স আর শেক্সপিয়ার শেষও করে ফেলেছিল, আর সেই না দেখে সোফি তার কাছে আবদার জুড়েছিল যে... নাঃ! আর একটুও বলব না

তবে সব কথার শেষ কথা, আরেকজন স্বপ্নওয়ালা না কি এর মধ্যেই এই গল্প নিয়ে একটা আস্ত ছবি করে ফেলেছেন! নাম তাঁর স্পিলবার্গ (spielberg)


আমি তো বাবা আঙুল ক্রস করে বসে আছি, কবে যে সেই ড্রিমল্যাণ্ডে ঢুকবো সে কথা ভেবে! তোমরা?



রবি (খবর ৩৬৫ দিন), ২৯শে মে, ২০১৬ তে প্রকাশিত

Comments

Popular posts from this blog

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিলাম পুঁতে। নতুন ভোরে খোলস ছেড়ে বেরি

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত করেছে। চ

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠিয়েছিলেন র