Skip to main content

বেহড়ের আনাচ কানাচ শুলুক সন্ধানের নয়া সম্বল- ‘আবার চম্বল’

বেহড়ের আনাচ কানাচ শুলুক সন্ধানের নয়া সম্বল- ‘আবার চম্বল’
শাশ্বত কর






‘কিতনে কপি থে?’
‘বহোত থে সর্দার!’
‘সারে বিক গয়ে?’
‘হাঁ সর্দার!’
‘কেয়া সমঝে থে, এক ভি কপি না মিলনে পর সর্দার খুশ হোগা! সাবাসি দেগা!’
‘হামনে চম্বল কা কাহানি ছাপে হ্যায় সর্দার! বেহড় কা খানা ভি খায়ে’.
‘তো আব......................!’

বলা যায় না, আসন্ন বইমেলায় শুভেন্দু দেবনাথের ‘আবার চম্বল’-এর মারকাটারি বিক্রিবাট্টার পর হয় তো প্রকাশক আর সর্দারের এমনি কথোপকথন হলেও হতে পারে। খুব অসম্ভব কিছু নয়। যে পরিশ্রম করে শুভেন্দু তার এই বইটি পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাতে পাঠক তার সমাদর করবে বলেই তো মনে হয়।
চম্বল নিয়ে মানুষের আগ্রহ তো আর কম কিছু নয়। তবে বাংলায় তার প্রামাণ্য পুস্তক হাতে গোণা। বলা যায় প্রকাশক হাওয়াকল সেই দায়টি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন।
গ্রন্থটি মহাভারত থেকে খুঁজে পাওয়া চম্বল নদীর অববাহিকা অথবা বেহড়ের ইতিহাস ভূগোল নিয়ে শুরু হলেও সে কেবল গৌরচন্দ্রিকা মাত্র। আসলে এ এক অভিযাত্রার কথা। পিলে চমকানো সব বেহড় কাঁপানো সিংহ সিংহীর ডেরায় ডেরায় এক আপাত নিরীহ সাংবাদিকের অনুসন্ধান। লেখার গঠন আর বাঁধন অনায়াসে ট্রাভেলগ উৎরে উপন্যাসের স্বাদ দেয়।
খেটেছেন লেখক। চম্বল অববাহিকা প্রচুর শুলুক সন্ধান করেছেন। একটি পত্রিকার হয়ে স্টোরি করতে গিয়ে অসংখ্য জীবন্ত স্টোরির সামনা সামনি হয়ে কখনও বিভ্রান্ত হয়েছেন মিথ আর বাস্তব, খবর আর সত্যের ফারাক দেখে। রোমাঞ্চিত হয়েছেন, কষ্টে কেঁদেছেন। বেহড়ের কোলে রাত কাটিয়েছেন। পাশ দিয়ে চলে যেতে দেখেছেন অজগর! জ্যোৎস্না রাতে একা বেহড়ে শুনেছেন হাড় হিম করা শিসের অপার্থিব শব্দ! বেহড়ের টিলায় টিলায় মাটির খোঁদলে মাতাল হাওয়ার দামালপনা দেখেছেন। কখনও দাগীর মোটরবাইকে, কখনো ট্রেকারের মাথায়, কখনো জিপে সওয়ারি হয়েছেন অভিযাত্রী সাংবাদিক। রাইফেল হাতে গালপাট্টা সব ত্রাসের সামনাসামনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। দস্যু সর্দারের মন্দিরে যেমন হাজির হয়েছেন, তেমনি মায়াময়ী দস্যুরানির অনন্য শরীরী আবেদনের সামনাসামনি হয়েছেন। হাত থেকে শুরু করে কানে সুড়সুড়ি পেরিয়ে রাতের ‘খাতিরদারি’র প্রস্তাব আলগোছে সরিয়ে রেখেছেন। বেহড়ের চাঁদনিতে পানীয়ের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে দস্যু সম্রাজ্ঞীর মুখে শুনেছেন, “সাহাব জঙলী আদমখোর উতনি জালিম নেহি হোতি হ্যায় জিতনি জঙ্গল কে বাহার লোগ হোতে হ্যায়!”
খুন কে বদলা খুন! চম্বলের এই প্রাচীন প্রবাদের অনুসন্ধান করতে এসে মন নিংড়ে নেওয়া সব সত্যি থেকে শুরু করে কামোল্লাস আর ব্যাভিচারের চরম ছবির যেমন যেমন মুখোমুখি হয়েছেন, ঠিক তেমনই ছবি যেন তুলে ধরেছেন লেখক। এখানেই তার মুন্সিয়ানা।
আর আলাদা করে নাম করতেই হয় প্রচ্ছদ শিল্পী বিতান চক্রবর্তীর। বেহড়ের এক খন্ডহরের সেপিয়া টোন আর রাইফেলের খঁজে চম্বলের ক্যালিগ্রাফি সত্যিই অনবদ্য!
চম্বলে আগ্রহী পাঠককুল অবশ্যই সংগ্রহ করতে পারেন। আর অ্যাডভেঞ্চার অথবা মানবিক উপাখ্যানের প্রত্যাশীরাও হাতে তুলে দেখতে পারেন, দেখবেন আর হয় তো নামিয়ে রাখতে ইচ্ছে করবে না! চম্বলের ম্যাজিক!



আবার চম্বল। লেখকঃ শুভেন্দু দেবনাথ। প্রকাশকঃ হাওয়াকল । মূল্যঃ ৩৫০ টাকা


Comments

Popular posts from this blog

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিলাম পুঁতে। নতুন ভোরে খোলস ছেড়ে বেরি

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত করেছে। চ

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠিয়েছিলেন র