Skip to main content

কী নিয়ে বাঁচি? মনুষ্যত্ত্ব না জীবন?




শাশ্বত কর



সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলেন দীপার্কবাবু মোট বিয়াল্লিশটা ধাপ চারতলা থেকে একতলায় ছেষট্টি দিন লাগল নামতে! অন্তত  ঊনসত্তর রকমের মানসিক উতরাই পার হতে হলো একশো বত্রিশ অথবা ছেষট্টির গুণিতকে করা যে কোনও সংখ্যক নিজেরই তেরছা মন্তব্যের বিষ মেখে নিতে হলো শরীরে! যাবতীয় ভয়, দুশ্চিন্তাকে জিয়ল মাছের মত এক কোণে হাঁড়ি চেপে জিইয়ে রেখে কোলাপসিবলের তালা খুললেন দীপার্কবাবু! অনন্ত আকাশের নিচে শুয়ে থাকা গলিটার কংক্রিটে দাঁড়িয়ে, শুন্যে ঝুলে থাকা কিশোর দীপার্কের দিকে ঘাড় উঁচু করে দীপার্কবাবু বললেন, ‘আঃ!’

এই আঃ শব্দটির কিন্তু অনেক মাত্রা! হতেই পারে দীর্ঘ ছেষট্টি দিনের গৃহযাপন জনিত গুরুপাকের উদ্গার! হতেও পারে হতাশার বুড়বুড়ি! হতেও পারে ব্যথার চাগাড়! হতেও পারে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরবর্তী মিলননাদ! আমাদের আন্দাজ করার উপায় নেই হে পাঠক! মুখের পেশিসমূহের সঞ্চালন জনিত যে বৈচিত্র্য আমাদের সুখ দুঃখ মিলন বিরহের আভাস দেয়, মনের সেই আয়নাটি আজ পর্দানসীন মুখোশ তাকে বলা যাবে না, মুখোশের অন্য অর্থ আমাদের সাহিত্যে, মাস্কের প্রকৃত প্রতিশব্দ যে কী সে বিষয়ে অজ্ঞানতা তাই অনুগ্রহ করে মার্জনা করবেনকাজেই গুহ্য কারণটি যাই হোক, একমাত্র জানেন দীপার্কবাবু!

মোদ্দা কথাটা হলো দীপার্কবাবু রাস্তায় নামলেন ছেষট্টি দিন বাদে পথের ধুলোয় পা দিলেন এই ছেষট্টি দিনের ব্যবধানে পাড়াটা যেন ছেষট্টি মাইল সরে গেছে অথচ দীপার্কবাবুকে কোনোভাবে আত্মকেন্দ্রিক তকমা আঁটা চলে না এই তুমুল সংকটের সময়েও (সংকট যে কত তীব্র সে নিয়ে ধুলোবালিরাও এ অধমের চাইতে বেশি অবহিত বলে বিস্তারে গেলুম না) গত দুমাসে তা প্রায় হাজার ছয়েক টাকা দান করেছেন নানান তহবিলে সে নিয়ে একবারও ঢাক পেটাননি, স্ট্যাটাস ঝোলাননি পাক্কা আড়াই মাস বিনা কাজেই বাড়ির দুই পরিচারিকাকে বেতন দিয়েছেন অচেনা অজানা অপটু নবীন গাড়ি থেকে চড়া দামেও কেবল মাত্র সাহায্যের কথা ভেবে চারতলা থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে সবজি, মাছ, ফল পাকুড় কিনেছেন পাড়ার আর সবার মত কাঁসর বাজিয়েছেন, আলো নিভিয়ে মোম জ্বেলেছেন এর পরেও পাড়া এমনফাইভ হান্ড্রেড মাইলসরল কেন?

প্রশ্নটা তো সহজ বন্ধু, ‘উত্তরও তো জানা!’ দীপার্কবাবু তো আর হরিপদর সামনে আকাশ থেকে নেমে আসাবড় বড় বড় বড় গোল গোল চোখনন, দীপার্কবাবু তো আমি বা আপনি অথবা আপনার ঈশান কোণে বেঁচে থাকা প্রতিবেশী যিনি কি না দশটা পাঁচটা ডিউটি জানেন, আংরেজি মিডিয়াম জানেন, প্রাইভেট টিউশন জানেন, বাজারের ব্যাগ জানেন, বিরাট কোহলি- নরেন্দর মোদি জানেন, গুরুপাকে জেলুসিল জানেন সোনার কেল্লা হীরক- রাজার দেশে জানেন, সঞ্চিতা সঞ্চয়িতা সুনীল শক্তি জানেন, রবিবারে চারঠেঙের ঝোল জানেন, ভগবদ্গীতা জানেন, পরের ঘরে গোল শুনলে জানালার পর্দা টেনে উঁকি দিয়ে টুকি টুকি শুনতে জানেন, সব্বোপরি ছেলে বৌ মেয়ে নিয়ে আইসোলেটেড সিস্টেম হয়ে বাঁচা যায় বলে ভাবতে জানেন বোঝা যাচ্ছে সুজন পাঠক, ইনি একেবারেই আমজনতার ভিতরঘরে বসত করা আপন জন!

করোনার খবর যখন আসতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই দীপার্কবাবু কিন্তু আর পাঁচজন শিক্ষিত মানুষের মতই সচেতন তখনও লক ডাউন হয়নি অফিসে, চায়ের দোকানে, ঠেকে তখনও আড্ডা ঘনায় সহকর্মী থেকে সহমর্মী সবাই- চীন,ইতালি, জার্মান, ইউ.কে. ঘুরে যদি এদেশে সেই মূর্তিমান(!) এসে ওঠেন- সেক্ষেত্রে কিংকর্তব্য নিয়ে মশগুল

সব শেষ হয়ে যাবে!’
একশো তিরিশ কোটির দেশ বাবা! এক পার্সেন্ট হলেই কী হবে বুঝতে পারছো?’
গড়ের মাঠকে হাসপাতাল বানালেও কুলোবে না!’
সত্যি! স্বাস্থ্যখাতে এত কম ব্যয়! একটা শিক্ষিত দেশে মানা যায়?’
বড় লোকের তো বাঁচোয়া! যত জ্বালা হবে গরীবের!’
শুনচি লক ডাউন হবে! চাল ডাল তুলে নিয়েছো?’

এইসব নদীতে আকাশে আলোচনা, যাকে কি না আমরা ভালোবেসে আড্ডা বলে থাকি, সে সব চারপাশে চললেও, তার নির্যাসের থেকেও আর পাঁচজনের মতোই দীপার্কবাবু নিজেকে আরও সচেতন বলেই ভেবে থাকেন সাশ্রয় অথবা আয়ুবৃদ্ধি যে কোনো কারণেই হোক, যে মানুষ সিগারেটের জন্য পরজীবী বলেই পরিচিত, সেই দীপার্কবাবু তখন পকেটে সিগারেটের প্যাকেট রাখেন ফিরতি পথে সবজি ছেড়ে দোকানে দোকানে মাস্ক স্যানিটাইজার খুঁজে ফেরেন অবিশ্যি সে তখন খ্যাপার পরশপাথর! রাই মেলে না, মেলে না! তারপর যখন মিলল, তত দিনে লকডাউন ঘোষিত

তারপর রাস্তারা সব ফাঁকা হয়েছে চায়ের দোকান ঘিরে বঙ্গে ব্যঙ্গ রঙ্গের ঢেউ খেলেছে পুলিশের লাঠিতে আমজনতার সমর্থন ঝরেছে, আবার একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে ব্যথাও ঝরে পড়েছে সোশ্যালমিডিয়া জুড়ে করোনার কারণ, ডাক্তারের বারণ, প্রাণায়ামে বিপত্তারণ, হোমমেড পাচন, ‘বড়লোকের বিটির নাচন- অশ্নন, স্পর্শন, জিঘ্রণ, স্বেদন- সবেতেই করোনা আফবল নম্বরে কামচাটকা টু কলকাতা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মিনিটে মিনিটে নানা আপডেট! একটা একটা খবর- বুকের ভিতর ঝাঁ ঝাঁ ঝাঁ! এই রে! আমার যে কী হবে, কী হবে!

সোশ্যাল ডিস্টান্সিংশব্দটা ছোট, ব্যাপ্তি কত বড় মনে মনে মালুম হচ্ছে! কাঁহাতক চুপ থাকা যায়! এই ভেবে লকডাউন ১.০তেই রামা শ্যামা বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায় বাইশ বছরের বিপত্নীক নিঃসন্তান জল্পেশ্বর জানারও মনে হচ্ছে হায় রে! একা একা আর দিন নাহি মোর যায় রে! আরে! বাইশটা বছর তোর সাথে কে ছিল র‌্যা?

মানব মনের এই হচ্ছে নিয়ম গন্ডী যদি কেটেছো তো গন্ডী পেরোতে মন চাইবেই ভার্চুয়াল বন্দি বন্দি ভাবসাব মনে এসে প্যঁপোঁ ভোঁপর ভোঁ বাজবে! ‘মা আমি বন্দি কারাগারে!’ দুনিয়ার ধুনো এক হও! অঢেল অবসর, মন খারাপের বিলাসিতা তো টুকুন চলেই! দুঃখু দুঃখু ভাব হাওয়া মোরগের মত নাচিবে ঘিরি ঘিরি গাহিবে গান! ভাবের ঠেলায় নিত্যিরুটিন পিছোবে বেলা তিনটেয় ঠাকুর পুজো, বেলা চারটেয় মাছ ভাত, মাংস ভাত ঠিকসে অ্যান্টি অম্বল পায়চারি ছাতের ছাতিমতলে কারো ঘুড়ি উড়বে, কারো ছাতনৃত্য হবে, কারও প্রাণায়ামী ফোঁস, কারও ওঠবোস! যেই না সন্ধ্যে সাতটা, তো খবরে ঢালিয়া দিনু মন! হোমমেড পেঁয়াজির সাথেই নেতা নিন্দার চাট! উল্লুস ঝুল্লুস লোলের সাথেই আহা উহু বোল! আহারে মিশে যাবে ‘আহা রে!’ পরিযায়ী শ্রমিকের দুরবস্থা চিন্তন! মাইলের পর মাইল কেবল পরিযায়ী শ্রমিক! স্টেশান চত্ত্বরে শ্রমিকের ভিড়! বাস স্ট্যান্ডে শ্রমিকের ভিড়!

‘এভাবে তো রোগ আরও ছড়াবে!’
‘গোটা পরিবার এক সাইকেল! সাইকেলে ঘুমন্ত সন্তান’
‘হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির অনেক কাছে এসে শ্রমিকের মৃত্যু! রেল লাইনে ছিন্ন শ্রমিকের পাশে পড়ে আছে ঝলসানো রুটি!’
‘আহারে! বাচ্চা ছেলেটা কেমন ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে সুটকেসের উপর!’

ইস! মুড়ি খেতে খেতে জিভে কামড় লাগে! চোখে জল আসে! এত কষ্ট দেখা যায়! ভাবা যায়!

এর আগে কোনোদিন দেখেছিস র‌্যা! শ্রমিকদের অবস্থা কি নতুন করে খারাপ? এখন মিডিয়ায় দেখাচ্ছে আর অমনি দরদ উথলাচ্ছে! আমায় যেমন দেখাও তেমনি দেখি, একটু ভাবি না!মোড়ের মাথার আড্ডা থেকে টুকরো কথা হাওয়ায় ভেসে ভেসে কানে আসে

এ ছবিও আমাদেরও চেনা, কী বলেন পাঠক? সন্ধ্যে হলেই পাড়ার মোড়ে প্রধানতঃ প্রৌঢ় প্রবীণরা টুকটাক একটু আধটু আড্ডা বসান তো? মুখে মাস্ক নইলে রুমাল? ইঁটাসন নতুবা স্কুটির উপরে এক হাত দূরে দূরে? বাড়িতে তখন ব্যঙ্গ বাজে, ‘হ্যাঁ! করোনা তো রাতকানা! সন্ধ্যের পর বেরোয় না!’

কোনো সরকার আমাদের কথা ভাবে না! সবাই এক!’
আরে! রোগ তো তেমন কঠিন না! আসলে মারাত্মক ছোঁয়াচে বলেই মুশকিল! দেশে যদি হাসপাতাল বেশি থাকত তাইলে কোনো ব্যাপারই না!’
হাসপাতাল তো সব একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!’
আবার খুলছেও তো! শুধু নিন্দে করো কেন?’
আমাদের দেশে সবতাতে রাজনীতি! শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে এমন কী আর্তের ত্রাণ দেবে তাতেও রাজনীতি! ছ্যাঃ! সাংবাদিক সম্মেলন করবে শুনলে ইদানিং ভয় হয়! কী জানি কী বলবে আবার’
‘বোলো না, বোলো না! এক্ষুনি কোনো দলের স্ট্যাম্প পড়ে যাবে! এ দেশে কথা বলা আর কথা শোনা-দুই অধিকারেই কিন্তু ফিল্টার লাগানো আছে!’
‘ধুস! দিকে দিকে লোক কাজ হারাচ্ছে! খেতে পাচ্ছে না! ও দিকে কথা বললেই জেলে ভরছে! ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই!’

এই সব বাদানুবাদও আমাদের চেনা। কোথায় কোন আড্ডায় কোন দিন পুলিশ এসে  টুক করে টুকুন আদর করে দিয়ে গেলেন, লুডো খেলতে খেলতে সে সব দীপার্কবাবুর মত আমরাও কপচাই। ব্যালকনি থেকে মুখে আঁচল চাপা রেশন ফেরতা মাসিমাকে দেখলে বিরক্তিতে মুখ আমাদেরও বোধ হয় অজান্তেই কোঁচকায়। ‘বোধ নেই না কি! এভাবে কন্টামিনেশনের প্রোব্যাবিলিটি তো বাড়ে! এর মধ্যেও রেশন!’

তবে কি না শেষ মেশ মানুষ তো! আরও দু দন্ড বেশি জীবনের জন্য চিন্তায় চিন্তায় এমন ভাব মুখে পোষণ করলেও মনে কিন্তু টুকরো ইচ্ছে ছুপি দেয়- রাহাদা, নাথদা, ভটচাযদাদের সাথে একটু আড্ডায় যদি যাওয়া যেত! কিন্তু জীবন যে বড় বালাই! একার তো নয়, গোটা ফ্যামিলির বিপদের কারণ হয়ে যেতে পারে!

পাশাপাশি দীপার্কবাবুর মনে আর একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে উঠেছে- রোগ যে রকম ছড়াচ্ছে তাতে কেবল টাকা পয়সা থাকলেও আর চলবে না, কানেকশানটাও মজবুত হতে হবে। ‘ওইত্তো, জগদীশবাবুর আর মনীমোহন বাবুর মা একই দিনে অসুস্থ হলেন। লোকাল ডাক্তার দু’জনকে দেখেই বললেন, ‘হার্ট আটাক’। অথচ একই নার্সিং হোমে মনীমোহনদার মা ভর্তি হতে পেল, আর জগদীশবাবুর মা প্রত্যাখ্যাত! শেষমেশ সরকারী হাসপাতাল! এই সময় তাতে ভয়টাও তো থেকে যায়, তাই না!’

একটা একটা দিন যায়, ভ্যান নিয়ে, সাইকেল নিয়ে সামান্য থোড়, পাটশাক বিক্রি করার লোক বাড়তে থাকে। মাছ নিয়ে এল সে দিন একটা ছেলে। মাছ কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে হাঁ! এই প্রথম বেরিয়েছে। কলেজে পড়ে। বাবার কাজ বন্ধ! দীপার্কবাবুর স্ত্রী ছেলেটার হাতে হাজারটা টাকা গুঁজে দিলেন! কিন্তু এ ভাবে কত দিন! কার ভান্ডার কত দিন দেবে! সুরাহা কী? পথ কোথায়?

ব্যালকনিতে বসে মোড়ের আড্ডা কান পেতে শোনেন দীপার্কবাবু। দোটানায় ভোগেন। রাগ না ঈর্ষা – কী যে বুঝতে পারেন না! একবার মনে হয়, গিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘করছেনটা কী? জানেন না সংক্রমণ ছড়াবে?’ কখনও মনে হয় রাতের অন্ধকারে পোস্টার সেঁটে আসেন ‘মরবে মরো! ছড়িয়ো না!’ খবরের সন্ধ্যায় কানে আসেঃ

‘সেবিকাদের পাড়ায় ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন বাসিন্দারা!’
‘পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে গেলেন বিরাট সংখ্যক সেবিকা!’
সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ভাসেঃ ‘করোনা সন্দেহে অমুক জায়গায় পরিবার একঘরে!’

ভাবনায় ঢেউ! আসে যায়! কখনও ভাবেন হয় তো ঠিক, রুগী আপন হলেও রোগ তো পর! যে শত্রুকে চোখেই দেখা যায় না, তার থেকে তো দূরে থাকতেই হবে। তারপর আবার ভাবেন, এরা তো কেউ আলাদা নয়। সব মিলেই যে সমাজ! আমরা যে সমাজবদ্ধ জীব! একেই তো মোবাইল মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়িয়েছে! তবু একটা বন্ধন ছিল, এই করোনা যে সেইখানে কুড়ুল মারছে! মানুষকে যে সন্দেহ হচ্ছে কথা বলতে গেলে! গ্যাস ওয়ালা সিলিন্ডার দিতে চারতলা উঠে এলেও তার হাঁপধরা দেখে মনে ভয় হচ্ছে, কখন নেমে যাবে, কখন ডিসইনফেক্ট্যান্ট দিয়ে মোছা হবে সে কথাই মনে ঘুরে ফিরে আসছে। মানুষটার ঘাম চোখে পড়ছে না, শ্রম চোখে পড়ছে না- চোখে পড়ছে মাস্ক, চোখে পড়ছে গ্লাভস!

যত দিন এগোচ্ছে এই দোটানা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে দীপার্কবাবুর। পরিচারিকারা আসতে চাইছে। তাদের আসতে দিতে মন চাইছে না! আবার কাজ না করিয়ে মাসে মাসে মাইনে দিতেও গায়ে লাগছে! কর্তব্য অকর্তব্যের এই দোলাচল, দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে দীপার্কর। ছেলের স্কুলে ভর্তির নোটিশ এসেছে। অনলাইন ক্লাস চলছে। ভর্তি না হলে যদি ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়! আফিসের পেন্ডিং লিস্ট ক্রমশঃ বাড়ছে! কবে করবেন সে সব? বাড়ি থেকে তো সব হয় না! বৃদ্ধ বাবা মা একা পড়ে আছেন বাড়িতে, ওখানে আবার কনটেইনমেন্ট জোন! যেতে গেলে ভয় জামা টেনে ধরছে! প্রতিমাসের তুলনায় খানিক বেশিই টাকা পাঠালেন। কিন্তু সুজন পাঠক, কেবল টাকা পাঠিয়ে কতদূর মন শান্ত থাকে!

এর উপর সাইক্লোন! আমফান! দানবের দ্বিতীয় নাম বোধ হয়! নেই নেই করে বয়স তো খুব কম হলো না দীপার্কবাবুর! এ যাবৎ এমন ঝড় দেখেছেন বলে মনে পড়ে না! তান্ডব কথাটার মানে যে ঠিক কী সে দিন রাতে টের পেয়েছেন। ঝড়ের সে কী তীব্র নিঃশ্বাস! শিসের মত শব্দ আছড়ে আছড়ে পড়ছে জানালায়! চারতলা যে সামাজিক সেফটি এড়িয়ে প্রাকৃতিক ভয়েরও কারণ হতে পারে, দীপার্কবাবু সপরিবারে সে দিন বুঝেছেন!

তখনও বলা যায় আসল ঝড় শুরুই হয়নি, হুড়মুড়িয়ে চোখের সামনে উপড়ে এল ফলন্ত আম গাছ! পাখির বাসা ছিল গাছটায়। ছোট্ট বাসা, দুটো কাকা, কটা যেন শাবক! কে জানে! কেউ কি আর কাকের ছানার খবর রাখে? আচ্ছা! কাজের মেয়ে দুটোর বাড়িতে কী হচ্ছে! গিন্নি ফোন করে জানলেন টিনের চালে বালির বস্তা চাপিয়েও ভিতর থেকে দুই হাতে চালের রড টেনে ধরে থাকতে হচ্ছে! ছেলে মেয়ে দুটো চৌকির নীচে!

তান্ডব তো প্রায় সারা রাত! ব্যালকনি থেকে, কাচের জানালা থেকে বৃষ্টির ছাঁট এসে জল থই থই! মাঝরাতে কোনো রকমে বাইরে বেরিয়ে দেখলেন গোটা পাড়া জলে ভাসছে!

সব অন্ধকারেরই ভোর থাকে! আজ ভোরের সূর্য রাস্তায়! জমা জলে ভাসছে! ভাসছে হাঁ করা কাক! সব বাড়ির এক তলায় জল! ফোনে নেটওয়ার্ক নেই! কারও খবর নেওয়া যাচ্ছে না! অসহায় লাগছে! অসহায় লাগছে!

জল দাঁড়িয়ে আছে কাল জলে মড়া কাক ভেসেছিল আজ ভাসছে ময়লার প্যাকেট হয় তো তার মতই কোনো আকাশবাসীরা উচ্ছিষ্ট নীচে অনেকের ঘরে এখনও জল! ময়লার প্যাকেট দরজার সামনে দোল খাচ্ছে ! দোল খাচ্ছে! তাতে আকাশবাসীর কী বা এসে যায়! এক জন সেই ময়লার প্যাকেট গুলো ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেলেন দূরে অনেক দূরে? তা না হোক শ খানেক মিটার তো হবেই! সেখানেই তো ভ্যাট আছে! কিন্তু আকাশবাসীর কী আর পায়ে জল লাগাতে আছে! পচা জল! ড্রেন উপচানো জল!  তিনি আকাশবাসায় সেফ! আঙুল ঠুকে ফেসবুকে সেফ হয়েছেন আকাশবাসী দীপার্কবাবু!

জল দাঁড়িয়ে আছে জলে মাছ জলে জোঁক জলে সাপ! গিন্নি বললেন, কাজের মেয়ে শিল্পীর সেজো বোনকে ঝড়ের রাতেই সাপে কেটেছে বাড়ির চালায় গাছের ডাল ঘরের ভিতরে জল খলবল চাল ডাল আলু আটা বাঁচাতে জলে পা জলে সাপ! সাপের কামড়ে হাসপাতাল! এখনও হাসপাতাল

জল দাঁড়িয়ে আছে জলে ঢেউ ঢেউ বাড়ছে! ঢেউ বাড়ছে! কেন বাড়ছে? শব্দ ফুটছেঃ সবজি, সবজি! মাছ! রুই, বোয়াল, ট্যাংরা...

জল দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ে বাঁধ ভেসেছে! দাওয়ার মাটি কাদা হয়ে মিশে গেছে জলে শহরে জলে মিশে গেছে সহায় সম্বল! শ্যালিকা বলছে জলে শুয়ে আছে গলফের মাঠ! সার সার গাছ! কাল না কি পাখি ডাকেনি! আজ দুটো চারটে এসে উঠেছে! মানুষের ঘরের চাল মিশে গেছে বাতাসে, মিশে গেছে জলে! হাহাকার! জলের নীচে মোবাইল টাওয়ার এখনওনেটওয়ার্ক নেই

জল দাঁড়িয়ে আছে কত জল! কত জল! জলের তলায় ট্যাপ! খাবার জল?
ফ্ল্যাটে কারেন্ট আছে! এক তলায় জল জমে থাকলেও পাম্প চলছে। দীপার্কবাবুর মনে হচ্ছে প্রতিবেশীরা তার ঘরে এসে অ্যাকোয়াগার্ড থেকে জল নিয়ে যাক, কিন্তু বলে উঠতে পারছেন কই? কে যেন এর মধ্যেও করোনার ভয় দেখিয়ে হাত পা বেঁধে রাখছে!

জল দাঁড়িয়ে আছে! স্বজনরা কেমন আছে? যেটুকু খোঁজ পাচ্ছেন, তাতে আর খোঁজ নিতে ভয় হচ্ছে সহকর্মীর হরিণঘাটার বাড়িতে ধানের গোলায় গাছ পড়েছে পুরোনো আম গাছ মাঝামাঝি ফেড়ে গেছে! গোয়াল ধসে গেছে গরু মিলছে না একটা! পাড়ার কাঁচাবাড়ি শেষ ওদের অসম্পূর্ণ দোতলায় কিছু পরিবার! খেত খলিয়ান শেষ ট্রান্সফর্মার, বিদ্যুতের খুঁটি উৎপাটিত

জল দাঁড়িয়ে আছে! টি.ভি.র পর্দায় মাথায় গামছা! হনুর হাড়ে নোনা জল! সামনে জলের নীচে শুয়ে আছে শ্রম! শুয়ে আছে ঘাম! শুয়ে আছে সহজে যাকে ফসল বলে ডাকি- চাষির সন্তান!

জল দাঁড়িয়ে আছে! জলে ভাসছে হাঁড়ি কড়াই! ভাঙা চালার বাতা! বাসার কঙ্কালের নীচে এক কোণে ইঁটের উপরে সিংহাসনে ইষ্ট দেবতা জল হাতড়ে কাঁসর তুলে রাখছে গৃহিণীর হাত গৃহ কর্তার ঠোঁটের কোলে নৈশব্দ! ঠোঁটের কাছে মাইকঃঝড়ে সব হারিয়ে কেমন লাগছে? কী মনে হচ্ছিল সেই রাতে?’

জল দাঁড়িয়ে আছে দীপার্কবাবুর মনে হচ্ছে জল দাঁড়িয়ে থাকুক আজ শুনেছেন, আকাশ থেকে দেখবেন দেবতা মাটির ছাওয়ালদের! দেবতা দেখবেন জল তাই দাঁড়িয়েই থাকুক দেবতা দেখতে পেলে তবু তো পাওয়া যাবে- ত্রিপল, আলু, চাল, মুড়ি যাকে কি না ত্রাণ বলে চিনি!

জল দাঁড়িয়ে মনের ভিতরে জল জমছে! খলবল ছলছল! মন খারাপের মেঘ বারবার বলে যাচ্ছে, ‘কিচ্ছু করবার মুরোদ নেই! কিচ্ছু করবার মুরোদ নেই!’ ব্যালকনিতে বসে অবশ দীপার্ক দেখছেন কষ্ট দাঁড়িয়ে আছে জলের মতন। পাড় ভাঙছে! পাড় ভাঙছে মনের! তবু মধ্যবিত্ত মন তো! জল কিছুতেই চোখ অবধি আসার পথ পাচ্ছে না!

নানান জায়গা থেকে একের পর এক টেক্সট আসছে!

‘গোটা বই পাড়া জলের তলায়! লক্ষ লক্ষ বই ভাসছে জলে!’
‘ত্রাণ নয়, বই কিনুন! বই উপহার দিন!’
‘পাশে দাঁড়াও! পাশে দাঁড়াও!’
‘বাঁধ ভেঙেছে! জমিতে নোনা জল! কাজ কেড়েছে লকডাউন! ঘুম কেড়েছে আমফান!’
‘পাশে দাঁড়াও! পাশে দাঁড়াও!’
‘মানুষ বড় কাঁদছে! পাশে দাঁড়াও!’
‘অ্যাকাউন্ট নম্বরঃ ***, আই.এফ.এস.সি. নম্বরঃ ***! পাশে দাঁড়াও!’

‘দাদা! এখনও আমাদের পাড়ায় লোক খেতে পারছে না! কিছু দাও! কিছু দাও!’ গত মাসে বন্ধুদের থেকে কিছু নিয়ে বাকিটা নিজে দিয়ে এক পরিচিতকে কয়েক হাজার টাকা পাঠিয়ে ছিল দীপার্ক। এ মাসে আবার ওদের রোজা! কিন্তু এ মাসেই ছেলের ভর্তি! কোথায় দেবে , কত দেবে, কতটুকু পারবে? দিতে পারা না পারার দ্বন্দ্বে মন ভারী হয়ে আসছে দীপার্কর। একটু হালকা হওয়া দরকার। ছোট্ট পরিবার না, পুরো পাড়া, পাড়া থেকে পল্লী আরো বড় হতে হতে রাজ্য হয়ে দেশ ঘুরে পৃথিবী! ছেলেবেলায় মুখস্থ করা সংজ্ঞাগুলো এই মাথায় ঘা দিচ্ছে! ঘা দিচ্ছে!

একা থাকাও যাবে না! একা বাঁচাও যাবে না! করোনার ভয়, লকডাউনের বিধিনিষেধ, আমফানের তান্ডব চোখে আঙুল দিয়ে দীপার্ককে অবস্থানটা বুঝিয়েছে। বাঁচতে গেলে যার মাস্ক নেই, অন্যের অপেক্ষা না করেই তাকে মাস্ক পড়িয়ে দিতে হবে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখতে হলে সোলের ডিস্টান্সিং কমাতেই হবে। আত্মার আত্মীয় হতে পারা না যাক, অন্তত সমমর্মী হতেই হবে। দূরে থাকা মানে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না, যাবে না!
‘মনুষ্যত্ত্বকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। তবেই জীবন বাঁচিয়ে বাঁচা যাবে!’

নখের মত চাঁদ ওঠা আকাশের নিচে ছাতে হাঁটতে হাঁটতেই গতকাল সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছিল দীপার্ক। আজ পাড়ায় ত্রাণ শিবির। সাড়ে চারশো মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিলি হবে। কোনো দল না, কোনো ক্লাব না, গলির মোড়ের দূরত্ব বজায় রাখা আড্ডাধারীদের উদ্যোগ।

এর আগের বার নিজের কন্ট্রিবিউশনের টাকাটা ভটচাযদার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে ঘরেই ছিলেন। এবার মাস্ক, গ্লাভস আর টুপি পড়ে গলির মোড়ে যাবার জন্য তৈরি হয়ে নিচে নামলেন দীপার্ক। ছেষট্টি দিন পর।

ঠিক করলেন কি?

-------X-------

                                                                                                                                    লেখাঃ শাশ্বত কর
                                                                                                                              ছবিঃ সংগৃহীত


Comments

Popular posts from this blog

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিল...

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত কর...

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠি...