Skip to main content

এমনই বরষা ছিল সে দিন

 


সময় রহস্যময় । তার রূপ দেখা যায় না, ফলে হাতে তার কোন অস্ত্র, সে জানাও দুঃসাধ্য। নিজের খেয়ালে চলে। অস্ত্র নয়, বোধহয় রং তুলি তার হাত জুড়ে । কী অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন আঁকা হয়ে যায় । মাঝে মাঝে যখন বাইরের ছবি দেখে ভিতরে তাকাই, মনে হয় এই বদল ভিতর ঘরেই বেশি। বাইরের যে বদল , সে পুরো দস্তুর নিয়মানুবর্তী । নিয়ম মেনে চাকায় চেপে ঘোরে। ঘুর্ণনের নিয়মে সে বদলের ছবি প্রায়শই এক। একমুখী বদলে যায় কেবল ভিতরের ঘর। বদলে যায় ভিতর ঘরের চার দেয়ালের রং। সে দিনের রং একরকম, তারুণ্যের ভোরে একরকম, আবার তারুণ্যের মাঝ আকাশে তার রং আর একরকম।



এই যে রাত ভর বৃষ্টি- ছেলেবেলায় বৃষ্টি আগেও হতো, এখনও হয়। জল এখন যেমন জমে, আগেও জমতো। বাড়ির পাশের ফাঁকা জমির মোথা মোথা শন, ঘাস, কচুবন, মোল্টা, কালকাসুন্দি, বনতুলসি জলে ডুবে ডুবে মাথা নাড়তে নাড়তে একদিন হলদে হয়ে যেত। মরা নারকেলের গুঁড়ি চেপে ছিপছিপে সোনাব্যাঙ । আধডোবা স্থলপদ্মের গাছে গোলাপি ফুলের পাশে দুধশাদা বক। সন্ধ্যে হলেই ঝিঁ ঝিঁ আর ব্যাঙের কাওয়ালি। জমে থাকা জল তখন খেলার মাঠ । হাওয়া কমে যাওয়া সাদা বল ভাসছে জলে, কয়েক জোড়া ছোট ছোট পা ঝুপুস ঝুপুস করছে জল ঘিরে। ভিজে চুপ্পুস! পুকুর ভেসে গেছে! কই উঠে আসছে উঠোনে । ইশকুল যেতে পিছলে পড়ছে ছেলেবেলা। ইশকুলে রেইনি ডে। বৃষ্টি নেমে আসছে পুকুরে! গাছের ডাল থেকে জলে ঝাঁপ দিচ্ছে ছেলেবেলা। ডুব দিয়ে শুনে নিচ্ছে বৃষ্টি আর পুকুরের মিলনসঙ্গীত! খিচুড়ির গন্ধ ভাসছে বাড়িতে। পাতের পাশে থাবা মাপছে মিনি আর পাঁচিলে অপেক্ষায় বসে আছে ভিজে শ্বারমেয়। 

অথবা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ছাতা, ছাতা চুঁইয়ে জল নামছে , জল নেমে যাচ্ছে পোশাক ছুঁয়ে মনের ভিতরে । জলের ছোঁয়ায় উত্তাপ! উত্তাল সমুদ্র আছড়ে পড়ছে মনের পাড়ে। পাড় ভেঙে যাচ্ছে । বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে । 'পুড়ে যায় অধরোষ্ঠ আগুনে ও বানে!' ওতপ্রোত হয়ে আছে যুগল সময় । সার্সির বাইরে জল ঝরছে, যুগল হাত ছুঁয়ে নিচ্ছে জল! অটোর বৃষ্টিতে, রিক্সার বৃষ্টিতে, লোকাল ট্রেনের দরজা ছোঁয়া বৃষ্টিতে ভাপ উঠছে। মহাকবি মৃদু হাসছেন, ছুঁয়ে দেখছেন মেঘদূত।


গতকাল সারারাত আকাশ কেঁদেছে। অশ্রু জমে আছে রাস্তায় । অশ্রুর উদ্বেগ ছুঁয়ে আছে মনের আকাশ । বাইরের আকাশে বদল খুব বেশি হয় নি। বদলে গেছে ভিতরের আকাশ । সেখানে আনন্দের বৃষ্টি ইদানিং খুব বেশি হয়না, বরং কাজ আর নিলামের দৌড় থামানো বৃষ্টি । জল জমে আছে রাস্তায় । কত কিছু কাজ পড়ে আছে, কত কাজ, কত কাগজ, কত ধমকি, কত দৌড়, ফের ধমকি, ফের কাগজ, ফের দৌড় । এই বৃষ্টিতে সব পন্ড । বৃষ্টির নাম উদ্বেগ। বাজার ঘাট, ওষুধপত্র...প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটু। কপাল কুঁচকে বিরক্তি!

সব কিন্তু একই আছে, কালোমেঘেই এখনও বৃষ্টি হয়, বদলে গেছে কেবল ভিতরের দেয়াল। সেখানের সাদা রঙে কখন যে ভুষো কালি লেপে দিয়ে গেছে সময় মালুমই হয় নি! 

30.07.2021


কপিরাইট: শাশ্বত কর 

রাতভর বৃষ্টি 




Comments

Popular posts from this blog

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিলাম পুঁতে। নতুন ভোরে খোলস ছেড়ে বেরি

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত করেছে। চ

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠিয়েছিলেন র