Skip to main content

Posts

Showing posts from 2023

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিলাম পুঁতে। নতুন ভোরে খোলস ছেড়ে বেরি

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠিয়েছিলেন র

একটি ভোকাট্টা হওয়া ঘুড়ি আর সম্মোহনের কল

  শাশ্বত কর চেত্তা খেতে খেতে সবুজ-সাদা একটা লাট্টু ঘুড়ি এসে ঠোক্কর খেল ছাতে। অনেক সুতো। হাতপাট্টি করতে করতে হাত ধরে এলো যেন। নিজের মনেই হাসছিলাম। ছোটবেলার অভ্যাস- ঘুড়ির থেকেও সুতোর টান বেশি। পকেটে খাবলা খাবলা হাতপাট্টি করা মাঞ্জা। ঘুড়ি, সুতো কোনোটাই তো কেনার উপায় নেই! অবশ্য তাতে সমস্যা তেমন কিছু না। ঘুড়ির ধর্মই সুতো কেটে ভাসতে ভাসতে নতুন কোনও ঠিকানায় গিয়ে ওঠা। কাজেই ভোর ভোর হাঁটলেও গতকালের শেষ বিকেলের কাটা খাওয়া দু’ একটা ঘুড়ি মাঠে , উঠোনের কোণে নয় তো গাছে বাঁধা অবস্থায় মিলে যাবেই। কিন্তু সুতো তো আর সবসময় ওভাবে মেলে না! হাত্তা দিলে মেলে বটে, তবে তাতে যে পরিমাণ গাল শোনার সম্ভাবনা, তাই সে বেলতলায় আর যাই না! অতএব-  যেখানে দেখিবে সুতা, দু আঙুল ঘুরাইয়া গুটা, গিট্টু বাঁধিলে তায়, লাটাই ভরে মাঞ্জায়! হাতপাট্টি করা সুতোর গোছটা ছাতের মেঝেয় নামিয়ে রেখে ঘুড়িটা হাতে নিলাম। কড়িটানা ঘুড়ি! এখন দাম কত জানি না! আমাদের ছোটবেলায় অস্ট্রেলিয়ান কাগজের এমন কড়িটানা দেড়তে ঘুড়ির দাম ছিল বোধ হয় পাঁচ টাকা। সাধারণ কাগজের একতে ঘুড়ি ছিল এক টাকা, আধতে আটানা। বড় দাদাদের কেউ কেউ দোতে ঘুড়ি ওড়াতেন। কী টান! মাঠ থেকে কয়েকজন ম

যেমন করে গাইছে আকাশ

কাছে এসে বসো। কথা নয়, পাখিগুলো উড়ে যাবে। জানালা খুলে দাও। বৃষ্টির গুঁড়ো আসুক। তোমায় ভিজতে হবে। বেশি ভিজলে তোমার তো শ্বাসকষ্ট হয়। সরে এসো। বৃষ্টির গুঁড়ো আসুক। দুজনায় মিলে হেঁটে চলে যাই অজানা দূর বুকের ভিতরে গাইছে একটা অচেনা সুর তোমার কাছেই সব খুশিগুলো জীবনভর সব ভুলে গেছি সব ভুলে গেছি আপনপর সব চাওয়া পাওয়া ছুঁড়েই ফেলেছি চোখ ভরে শুধু তোমাকে দেখেছি তোমার কাছেই জীবন দিলাম গচ্ছিত শালের পাতায় ভাত বেড়ে দাও কলস থেকে জল ভরে দাও জীবনখেলায় তোমায় ভুলে লজ্জিত  কোথাও যাওয়ার নেই। পাশটিতে এসে বোসো। আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরছে ঘাসের উপর পাতার উপর রোদের উপর বৃষ্টি নামুক তোমায় ছুঁয়ে বৃষ্টি নামুক পুনর্বার এই মুহূর্ত কোথায় ছিল কীসের লোভে ভুলেছিলাম জীবনপুর অবসরের মাঠ খোলা থাক যুদ্ধবিমান আজ তোলা থাক চোখের উপর ভাসতে থাকুক সমুদ্দুর কিচ্ছু করার নেই কোনো কাজ বাকি নেই আমাদের এসো, পাশাপাশি বসে দেখি শুধু ঝরছে যেমন ঝরতে থাকুক পুড়ছে অধর পুড়তে থাকুক বদর বদর! দাও, তুলে দাও নাওয়ের কাছি অনেক পরে বৃষ্টি এলো জ্যোৎস্না ফোটাও আমার আলো একদিন নয় মানুষ হয়ে এমন বাঁচি উবুর ঝাপুর