Skip to main content

আজ আমাদের নেড়াপোড়া

আজ আমাদের নেড়াপোড়া

শাশ্বত কর 


 ইশকুল ছুটি হল কি না হল দুদ্দাড় করে দৌড়। দলের সব্বাই! দৌড়তেই হবে। নইলে অন্য দল যে নিয়ে নেবে। শেষমেশ হারতে হবে নাকি! নৈব নৈব চ! কাজেই ছুট। ছুটতে ছুটতেই হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, মানে সুপুরির পাতা, তালের ডগা, নারকেলের ডাগা- কুড়িয়ে নিয়ে ছুট! ভাঙা ভাঙা পিচের রাস্তা। শুকনো পাতার ঘষায় তার গয়না আলগা। কুচি পাথর পাতার টানে নড়নড়িয়ে এগিয়ে চলে। ধুলো ওড়ে। উড়ুক গে। আগে তো পাড়ায় পৌঁছোই, তারপর ভৌমিকদের ভিতের গর্তে এগুলো ডাঁই করতে হবে। ওটাই এবারের গুদাম। গুদামে মাল জমা চলছে গত সপ্তাদুয়েক। মন ভরছে না। আজ শেষদিন। বাড়ি গিয়েই তাই বস্তা নিয়ে বেরোনো হবে কুচো পাতা একাট্ঠা করতে।


তাই হল। দলে পাঁচজন। দুটো বস্তা। একটা ভরতে হবে বাঁশপাতায়। কাজেই যেতে হবে ক্যাটাইবুড়োর বেগুন খেত পেরিয়ে মিত্রবাড়ি। বাড়ি বলে বাড়ি! যেমন বড় কবি, তেমনি বড় তাঁর মামার বাড়ি! যেমন ছন্দের যাদুকর, তেমনি ছন্দ ভরা বাগান! বাগানের ভিতর দিয়ে আমাদের ইশকুল যাবার শর্টকাট। গাছ আর  গাছ! শাল সেগুন শিমুল অশোক। একপাশে বাঁশের ঝাড়। সারাক্ষণ সরসর সরসর হাওয়া। 
সেখানে পৌঁছেই বাঁশপাতা কুড়োতে শুরু করে দিল বুড়ন আর মিলু। বুকু আর মান্তু বস্তা ধরে আছে। দু’হাতে খাবলা খাবলা তুলে বস্তায় ঠাসা চলছে। লম্বা লম্বা সরু সরু বাঁশপাতা। উপর থেকে হাওয়ায় হলদে পাতা ঝরে পরছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। দুটো কাঠবেড়ালি বাঁশঝাড়ের গোড়া থেকে উঠে কিচিক কিচিক করে ধমকাল। যেখানটায় মোটা দুটো বাঁশের গোড়া ‘ভি’ হয়ে আছে সেখান থেকে মুখ বাড়াল চ্যাপটা মত কী! তারপর সরসর করে নেমে এল এ দিকে। ছোটার আগে চেঁচালাম ওরে পালা পালা! আরে ভোলা রিফ্লেক্স কারে কয়! বস্তা টস্তা ফেলে দৌড়তে গিয়ে বুড়ন পরল বুকুর ঘাড়ে! দুজনে মিলে সে কী হামড়া হামড়ি খামচা খামচি! ও দিকে মান্তু দৌড়তেও পারে নি, বুঝতেও পারেনি কী হল! সবাইকে পালাতে দেখে হতভম্ভ হয়ে ভ্যাঁ করে কান্না! মিলু লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে মিত্তিরদের পাঁচিলে উঠে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে! যাকে বলে কম্পলিট প্যান্ডিমোনিয়াম!

শেষমেশ মিলুই উপর থেকে চেঁচাল, ভোমলাটাকে আনাই ভুল! নিজে কোনো কাজও করবে না, ভুলভাল চেঁচিয়ে সব পন্ড করবে! বলতে বলতেই সে নেমে এসেছে। গড়াগড়ি সেরে বুড়ন আর বুকুও স্টেবল। কেবল কানের পাশে মাথার জটে বাঁশপাতা পাতা খামচা খামচা লেগে! মান্তু হাতের পিছনে চোখ ডলছে। ফর্সা গালে কালো কালো জলের ফোঁটা!

যাব্বাবা! সব দোষ আমার! বাঁচানোর জন্যে চেঁচালুম, আর আমাকেই দোষ! নিমকহারাম সব!

শোন ভোমলা, মিলু খ্যাঁকাল, মাঝে মধ্যে ইলেকট্রিক নুন খাওয়াস বটে তবে সে জন্যে নিমক হারাম বলতে পারিস না। এইমাত্র যে ব্লান্ডারটা তুই করলি..

কী ব্লান্ডার রে! দেখলাম অত বড় একটা প্রাণি হড়বড় করে নেমে আসছে আর তোদের সাবধান করব না!

আরে হাবা আগে প্রাণিটা কী দ্যাখ! গোসাপ দেখে কেউ অমনি করে!

না করে না! তোমার মত ডাকাত তো আর সবাই নয়! আমার ভয় হয়েছে তাই সাবধান করেছি। তাছাড়া গোসাপ যে ক্ষতি করে না, এমন কথা কোথাও লেখা আছে?

ঝগড়া ঝাঁটি বন্ধ! বুড়ন চেঁচাল।

তখনকার মত চুপ করে দু বস্তা ভর্তি বাঁশপাতা এনে যখন গুদোমে ঢাললাম, ততক্ষণে বুড়ন আর বুকুর গায়ে চাকা চাকা গরল!

গরল না হাতি! সব তাতে ভোমলাটার বাড়িয়ে বলা! ঘাম গায়ে পাতা লাগলে অমনি চুলকোয়। তাতে কী হয়?

দুপুর পার। ইশকুলও ছুটি। মিলু টকটকি বাজিয়ে ডেকে বলে গেল চলে আয়। গিয়ে দেখি স্ট্রাকচার প্রায় রেডি। গতবারের থেকে এবার বড় হবেই। ইয়া লম্বা লম্বা দুটো বাঁশ পোঁতা হয়েছে মাঠের মাঝখানে। এবার সে দুটোয় আড়বাঁশ লাগানোর কাজ চলছে। লাগানো হলেই সাজানো শুরু।

উঁহুহু! এ বার ওমনি হবে না। আর ক’টা বাঁশ আছে বলতো?

আরও গোটা পাঁচেক কাকু।

দুটো..দুটো..ওপাশে আর দুটো..আর একটা জোগাড় করতে পারবি?

কী করবেন এবার সনৎদা?

আর কী! ভাবছি এবার বুড়ির ঘরটাকে দোতলা করব। দুটো ফ্লোরে দু’রকম পাতা। দু রঙের আগুন।

ডিভাইডার থেকে পাতার মালা ঝুলিয়ে দোবো নাকি সনৎদা? আলোর মালা। ফুড়ফুড় করে পুড়বে।

এ সব হবে এবার কাকু? ভিতরে আনন্দ একেবারে ডিগবাজি খাচ্ছে।

হবে মানে? সনৎ কাকুর গলায় বব দা বিল্ডারের আত্মবিশ্বাস, তা হলে আর আছি কেন? শুধু বাঁশটা নিয়ে আয়।

তোদের কাকিমাকে বল, লালটু কাকু বলল, বাড়ির পিছনে স্ট্যাগ করা আছে। ওখান থেকে দিয়ে দেবে।

বাঁশ এল। মই এল। গুনার তার এল। মাচা বনল। মাচা থেকে নারকেলের ডগা ঝুলল। সনৎকাকু উঁহুহু উঁহুহু করে সাজানোর তদারকি করলেন। বিকেলের শেষদিকে, যখন আকাশে লাল তখন শেষ হল।

মাঠে তখন খামচা খামচা বসে সবাই। কাকুরাও সবাই আছে। দাদাভাইও এসে গেছে। বলল, ওটা কার ঘর বল তো?

কার আবার? বুড়ির। সব্বাই বললাম।

বুড়ি তো। কিন্তু বুড়ির নাম কী?

এ ওর দিকে তাকালুম বটে, কিন্তু ঘটে কিছু এল না। আসলে মনের ভিতর তখন হড়বড়ানো তাড়া। কখন হবে কখন হবে…

দাদাভাই বলল, বুড়ির নাম হোলিকা। নাম শুনেছিস?

বললাম, না!

দাদাভাই বলল, হোলিকা ছিল রাজা হিরণ্যকশিপুর বোন। হিরণ্যকশিপুর ছেলের নাম ছিল কী বলতো?

এটা আমার জানা ছিল। বললাম, প্রহ্লাদ।

রাইট! এই নে তোর পুরস্কার!

পপিন্সের একটা রিং। গোলাপি। মুখে পুরে চুকুস চুকুস চুষতে লাগলাম।

দাদাভাই বলছে, হিরণ্যকশিপু তো বিষ্ণুবিরোধী। নামই সহ্য করতে পারে না। ও দিকে প্রহ্লাদ আবার পরম ভক্ত। নানা ব্যবস্থা চলছে তাকে বিষ্ণুনাম ভোলানোর। নানান পরীক্ষা। তারই মধ্যে একটা সাথে আমাদের এই হোলিকা জড়িত।

কী ভাবে? কী ভাবে?

ব্যাপারটা কী শোন, হিরণ্যকশিপু জানতেন, হোলিকার আগুনে কোনো ক্ষতি হবে না। ওর তো বর পাওয়া ছিল। তাই তিনি হোলিকাকে আদেশ করলেন, যাও প্রহ্লাদকে কোলে করে আগুনে প্রবেশ কর। ওদিকে বর তো ছিল একা প্রবেশ করার। দু’জনের তো নয়। তাই আগুনে পুড়ে ছাই হল হোলিকা আর বিষ্ণুনাম স্মরণ করে রক্ষা পেলেন প্রহ্লাদ। সেই থেকে হোলিকা দহনের রেওয়াজ। এমনকী হোলিকা দহনের ছাই ঘরে রাখারও রেয়াজ আছে জানিস? এই হোলিকার থেকেই তো হোলি।

তাই না কি!

আরও অনেক কাহিনি আছে। ধুন্ধি রাক্ষসীকে পোড়ানোর গপ্প আছে। সে আবার নাকি বাচ্চাদের ধরত আর গপ করে গিলে খেত। শেষমেশ রাজপুরোহিতের নিদানে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় বাচ্চা ছেলেরা যখন কাঠ আর ঘাসের স্তুপে আগুন দিল আর তার চারপাশে গান গেয়ে তালি দিয়ে নেচে বেড়াল, তখন গিয়ে মরল ধুন্ধি।

এগুলো সত্যি?

কে জানে? হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে! আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় নেড়াপোড়া না, আসলে হয়তো নাড়াপোড়া। নাড়া জানিস তো?

মাথা নাড়লাম। 

দাদাভাই বলল, ফসল কেটে নেওয়ার পর জমিতে মাটি আঁকড়ে পরে থাকা অংশটাকে নাড়া বলে। চাষিরা অনেক সময় সেই নাড়া পুড়িয়ে দেয়। তাতে যেমন জমি ফাঁকা হয়, তেমন জমিতে সেই ছাই মিশে মাটি খানিক উর্বরও হয়। তবে আসলে কি মনে হয় জানিস তো? এ হলো শীতের শেষে বসন্তর আগমনকে ওয়েলকাম করা। বোনফায়ার। নানান কথার আদলে এটাই হলো আদত কথা।

দাদাভাইয়ের গপ্প চলল আর চলল। ওদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে ভালোই। মাঠে সব্বাই এসে গেছে। হঠাৎ দেখি পুবের আকাশ লাল! গৌতমদের পাড়ায় শুরু হয়ে গেছে। হই হই হই হই।

ও কাকু আমাদেরটা কখন? এবার হোক।

আরেকটু দাঁড়া। কাকিমারা আসুক।

সবাই এসে গেছে। এবার জ্বালাবো।

জ্বালাবি কী রে! আলু এনেছিস?

ওইত্তো! মান্তু দেখাল।

এতগুলো আলু গুনার তার দিয়ে মালার মত গাঁথা। কাকু সেটা নিয়ে পাতার ভিতরে কোথাও একটা ঝোলাল।

তারপর সব্বাই রেডি। বুকন, মান্তু আর দাদাভাই গিয়ে মশাল দিয়ে বুড়ির ঘরের নিচের দিকের শুকনো পাতায় দিল আগুন। ফড়ফড় করে জ্বলে উঠল। হোওওও করে চিৎকার। ফড়ফড় করে আওয়াজ হচ্ছে। শুকনো ডাল ভাঙছে ফট ফট। পাতাজ্বলার  গন্ধ! আগুনের ফুলকি উড়ে উড়ে যাচ্ছে। এই আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ল। লাফিয়ে ফটাস করে চাপড় দিয়ে নেভালাম। হাতে ছ্যাঁকা লাগল। লাগুক। সবাই তালি দিয়ে দিয়ে গান করছেঃ

আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া
কাল আমাদের দোল
পূর্ণিমার ওই চাঁদ উঠেছে
বল হরি বোল…

গান করতে করতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন যেন হল। চাঁদের পাশ দিয়ে ছাই উড়ছে। আচ্ছা, এতই কী ভয়ানক ছিল হোলিকা আর ধুন্ধি! বছর বছর তাদের পোড়ানো আর হাততালি দিয়ে গান! নাঃ, বাবার কাছে জানতে হবে।

আর গান গাইতে ইচ্ছে করছে না। ওদিকে আগুনও নিভু নিভু। ছাই উড়ছে। মিলু হাতে করে তাই খানিকটা মুখে মাখিয়ে বলল, হোলি হ্যায়!

ব্যস! কোত্থেকে চলে এল আবির! শুরু হল আবির খেলা। চুলে আবির দেয়ার নামে চুল টানল বুড়ন। তাড়া করলাম। পালাল। ওদিকে নেড়াপোড়ার ঘর থেকে তখন আবার আলু উদ্ধার চলছে। পোড়া আলু ছাড়িয়ে কাকিমারা মাখছেন। খানিকটা আমার হাতে দিলেন কাকিমা। খেতে গিয়ে দেখি পোড়া পোড়া গন্ধ। খেলাম না। দেখে কাকিমা বলল, একটু হলেও খেতে হয়।

বললাম, কেন?

অত প্রশ্ন করিস না তো! খেতে হয় জানি তাই খেতে হয়।

যাব্বাবা!
……………………………………………………………………………………………………………………….
চুপিচুপি একটা সত্যি কথা বলি, বুকুদের কাউকে বোলো না- বুড়ির ঘর পোড়ানোর চেয়ে বুড়ির ঘরের পাতা কুড়োনোটায় না ঢের বেশি মজা ছিল।



10.03.2017, magazine.kolkata24x7.com প্রকাশিত

Comments

Popular posts from this blog

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কি? যাচ্ছেন কোথায়? লাখ টাকার প্রশ্ন! বিজ্ঞানের এক উত্তর, শিশু ভোলানাথের এক উত্তর, গোঁয়ার গোবিন্দর এক উত্তর, বোদ্ধার এক উত্তর! ঘন রহস্য! অথবা কোনোই রহস্য নেই। কৃষ্ণ কেমন, না যার মন যেমন। জলে হাওয়ায় গেলাস ভরা ভাবলে ভরা, আধখানা খালি ভাবলে খালি। আসল কথাটা হলো আজ বছরের শেষ সন্ধ্যে। আজ হেব্বি সেলিব্রেশন! কোথাও জামাল কুদু, কোথাও লুটপুট গয়া তো   কোথাও দিন হ্যায় সানি সানি সানি-   চারপাশ থেকে নানা রকমের গান ভেসে আসছে। একের সুরে আরেক চেপে বসায় কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মনে। এমনটাও ভালো। এতেও এক ধরণের নির্লিপ্তি আসে। নির্লিপ্তিই তো মুখ্য, নির্লিপ্তিই মোক্ষ। আজ ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোর একটু পরিচর্যা করলাম। খালি দুটো টবে দুটো বীজ পুঁতলাম। একটা উচ্ছের  আর একটা ঢেঁড়সের । এই দুটোই আসলে আজকের বর্ষ শেষের আমি। কাজের দুনিয়ায় যেমন তেঁতো, ঘরের দুনিয়ায় তেমনি ঢেঁড়স। তো দুই আমিকে বছর শেষে দিল...

অসুস্থ সমাজ, অরাজনৈতিক আন্দোলন এবং নিছক সাধারণী আবেদন

  ডাক্তারদের অনশন আজ ১০ দিনে পড়ল । পাঁচই অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। প্রথমে ছ'জন পরে আরো একজন , উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আরও দু'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। বলছি বটে জুনিয়র, কিন্তু যে পর্যায়ের পরিণত মনোভাব এঁরা দেখিয়েছেন এবং দেখাচ্ছেন চিকিৎসা পরিভাষায় যাই হোক, মানবতার পরিভাষায় এরা সিনিয়রস্য সিনিয়র।  অনশন। কেবল জল। আর কিছু নয় । বলাই সহজ, কাজে মোটেই সহজ নয়। একবার রাগ করে না খেয়ে একবেলা ছিলাম। আর মনে পড়ে আর একবার মায়ের সাথে উপোস করেছিলাম কোজাগরি পূর্ণিমায়। দুবারই সন্ধ্যে হতে না হতেই হাটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগেছিল। আর টানা 10 দিন অভুক্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা! এখনো চলছে তাঁদের অনশন ব্রত।  শারীরিক সমস্যা জয় করতে হচ্ছে। জনমানসের আশা প্রত্যাশার পাহাড় জয় করতে হচ্ছে। মানসিক চাপ জয় করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের চাপ। সহজ কথা তো নয়। তাও জয় করতে হচ্ছে। অকথা কুকথাকে খড়কুটোর মত ছুঁড়ে ফেলে পাখির চোখে চোখ রাখতে হচ্ছে। কেন করছেন তারা অনশন? রাজ্যে গত নয়-ই অগস্ট নারকীয় ঘটনা ঘটে গেছে আর জি কর মেডিকেল কলেজে। তাদেরই সহকর্মী দিদি অথবা বোনের নৃশংস পরিণতি তাঁদের মুঠো শক্ত কর...

এসো মা, এসো মা উমা

 শাশ্বত কর সুপ্তপর্ব “যেয়ো না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!” ঠাকুর দালানে ধুনুচি সাজানো হচ্ছে। এও এক শিল্প! নারকেলের ছোবড়া উল্টো করে এমন করে সাজা হবে যে ধুনুচি নিম্নমুখী হলেও সহজে পড়বে না! নইলে আরতি জমবে কেমন করে!  ছোবড়া চুঁইয়ে ধোঁয়া মিশছে বাতাসে। বাতাসে ধুনোর গন্ধ! বাতাসে কর্পুরের গন্ধ! বাতাসে শিউলি, ছাতিম, বাতাবি ফুলের গন্ধ! বাতাসে ঠান্ডা আদর! আদর আমার গালে। মায়া আদর, আচ্ছন্ন আদর। যে সুগন্ধী বাতাস নাকি গোলাপের মৃদু পাঁপড়ি এই আদর এঁকে গেল, এই তো খানিক আগে যখন তেতলার চক বারান্দা থেকে ঝুঁকে নিচে ঠাকুরদালানের পাশে রাঙাপিসিমাদের আড্ডা দেখছিলাম, তার নাম এখানে লেখার কীই বা দরকার? গতকাল সকালে পুষ্পাঞ্জলির ফুল বেলপাতা সেই আমায় দিয়েছে, ভিড়ের অছিলায় আঙুল ছুঁয়ে গেছে। কাছে আসলেই মায়ের পুজোর গন্ধ ছাপিয়ে যে গন্ধটা আমায় কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠিক পুব বাগানের বাঁধানো বেদির পাশে রাত আলো করে থাকা নিশিপদ্মের মতো! এ গন্ধের কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা! এখন যেমন হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছি চক বারান্দায়। হাতে শ্রীশঙ্খ! ঠাকুর তোরঙ্গ থেকে বড় শাঁখখানা আনতে পাঠি...