Skip to main content

নিম্নচাপ

 


ত্তর পূর্ব থেকে হাওয়া দিচ্ছে। নিম্নচাপের বৃষ্টি ঢুকে পড়ছে জানলা দিয়ে ঘরে। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দু' একজন ফেরিওয়ালা কচিৎ হেঁকে যাচ্ছেন। বর্ষাতি পরে ছেলেমেয়েরা টিউশন নিতে গেল। রাস্তার জমা জল ছেটাচ্ছে মজায়। 


এমন দিন ছেলেবেলারই।  ফুটবলের।  পুকুর ঝাঁপানোর। জলখেলার। ঠান্ডা জল সর্বাঙ্গে। ডুব দিলে বৃষ্টির নিক্কণ।  আঃ!

আমাদের তখন ছোট বাড়ি। বৃষ্টি এলেই ছাদে ঝমঝম শব্দ ফোটে। কার যেন বাগান কেটে ছোট ছোট প্লট। জমির সীমানা নির্ধারক পিলার মাটি থেকে একটু করে মাথা তুলে যেন চারপাশ থেকে মালিকের জমি আলাদা করে রাখে।  বেশিরভাগ জমিই তখন ফাঁকা। এমন নিম্নচাপের দিনে পুকুর ভেসে যায়। কই মাছ উঠোনে হাঁটে। হাম্বার সাইকেলে চেপে বাবা অফিস চলে গেলেই দুনিয়া আমার। বাড়ির পাশে জমা জল। জলের নিচে ঘাস। পাঁচিল থেকে ভূমধ্যসাগরে লাফিয়েছি। হাতে বাতার তলোয়ার।  ওপাশ থেকে পার্থ লাফিয়েছে। দেবাশীষ এসেছে। হাতে লোহার পাইপ বাঁকানো বন্দুক। তিনদিক থেকে জলদস্যুদের আক্রমণ। ভুমধ্যসাগর আগাপাশতলা আন্দোলিত। ফেনার ঢেউ উঠছে। আক্ষরিক অর্থে কচু কাটা হচ্ছে নবীন কচুবন। ফড়িং এর দল হেলিকপ্টার চড়ে পালাচ্ছে। প্রাণ হাতে নিয়ে ব্যাঙ লাফাচ্ছে। জলদস্যুদের কেউ একজন সাগরে সাঁতার দিলো। অমনি মায়ের চিৎকার! অল কোয়াইট ইন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট। খেলা বন্ধ।

এক টুকরো বারান্দা । বারান্দায় সিমেন্টের  জাফরি। ওপাশে ছোট্ট একটা ডোবা। জলে টুপটুপা। বাইরে বৃষ্টি। কাঠের স্কেল আর আর কাচের গুলি । বারান্দায় ক্রিকেট চলছে। ওভার ড্রাইভ। সিমেন্টের জাফরির ফোঁকল গলে গুলি বল বাইরের ডোবায় টপাৎ! জাফরির ফুটো দিয়ে তাকিয়ে দেখি ডোবার পারে এই লম্বা সোনালি সবুজ একটা ব্যাঙ। একলাফে পার হয়ে গেল ডোবা। স্থির বিশ্বাস ছিল ওটি আসলে ব্যাঙ রাজপুত্র।  পরে অনেক খুঁজেছি, দেখা পাইনি।

এমন বৃষ্টি মানে খিচুড়ির সুবাস। মা করলে একরকম, দিদা করলে আরেক রকম স্বাদ।  পাশের বাড়ির বম্মার খিচুড়ি আবার ঝরঝরে। তার স্বাদ আরেক রকম। পাতে গরম খিচুড়ি। বাইরে বৃষ্টি। আম গাছের ডালে  জলের ধারা। পেয়ারাফুল থেকে টপটপ জল ঝরছে। পাশের বাড়ির কাকু বারান্দায় ঢুকতে ঢুকতে বলছেন, 'করদা, খিচুড়ির গন্ধ পাচ্ছি!' মা কাকুকে খিচুড়ি দিচ্ছেন। ঝাপসা বৃষ্টিতে দেখছি দাদারা মাঠে ফুটবল খেলছে। মাঠ চরা গরু গাছের নিচে দাঁড়িয়ে জাবর কাটছে।

আকাশে এমন দিন এলে আমিও ইদানিং জাবর কাটি। রান্নাঘরে খিচুড়ি বসে। চিমনির সাকশন গন্ধ নিয়ে সোজা ট্রান্সফার করে আকাশে। পাশের বাড়ির কেউ জানেই না!

©️ শাশ্বত কর

শময়িতা

25.10.2024




Comments

Popular posts from this blog

অহনা আলোর পথযাত্রী- এখানে থামবে না

   অহনা - The Light Within ওই শেষের কথাটিই ছবির সুর। মন ছোঁয়া সুর। লালন সাঁই এর গানে মায়াময় এক দৃশ্য মিশে যাচ্ছে। উত্তরণ। উত্তরণের অভিযাত্রা। মানুষের পরিচয় মানুষ। নারীবাদিতার ট্যাগ আঁটলে এ ছবির সাথে খানিক অনুচিত হবে বলেই এই সামান্য কলমচির অভিমত। কথা বলছিলাম প্রমিতা ভৌমিক লিখিত, পরিচালিত, প্রযোজিত ছবি 'অহনা' নিয়ে। অভিধান বলছে অহনা শব্দের অর্থ উষা, দিনের প্রারম্ভ, উজ্জ্বল। আর ছবি বলছে অহনার ভিতরের রাত কেটে ভোরের কাছে যাওয়ার গল্প। গল্প চেনা। আশপাশে তাকালে- আশপাশে কেন পরিবারে তাকালেই চোখে পড়বে এমন গল্প। গল্প বলা- স্পয়লার দেওয়া আমার কাজ না। কাজেই দিলাম না। কেবল এটুকু বলি অহনা সমাজের সংবেদনশীল এক মেয়ে। লেখক। লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক। অধ্যাপক স্বামী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শ্বশুর আর কাজের মানুষ নিয়ে গোছানো সংসার তাঁর। অন্তত বাইরে থেকে তো তেমনই মনে করা যায়। খুব ভুলও নয়। না , এটা বলাই আমার ভুল হলো- সংসারের, পরিবারের ভিত যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা- অহনা আর তাঁর অধ্যাপক বরের মধ্যে সেইটিরই অভাব। বড় অভাব। অভাবের কারণ অবশ্য লুকিয়ে শরীর ছুঁয়ে মনে। সমাজ ছুঁয়ে মনে। দ্বন্দ্ব ছুঁয়ে সম্পর্ক...

যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ !

  স ত্যিই যুদ্ধ। যুদ্ধ বলে যুদ্ধ! চোখের সামনে যুদ্ধ, নায়কে খলনায়কে যুদ্ধ, দেশে দেশে যুদ্ধ, গানে Gun-এ যুদ্ধ, কানে কানে যুদ্ধ, মনে মনে যুদ্ধ। ধিম ধুম ধাসুম গুদুম গাদুম - বোম পড়ছে, গ্রেনেড পড়ছে , বাড়ি উড়ছে, গাড়ি উল্টচ্ছে, গাড়ি গুঁতোচ্ছে , হেলিকপ্টার উড়ছে, জেট উড়ছে, জেড নিরাপত্তা বুড়ো আঙুল দেখছে, আঙুল চুষতে চুষতে চোর ঠেঙান ঠেঙাচ্ছে হিরো - সব কুছ আরামসে! আরি বাপরি বাপরি বাপ! ওয়ান ম্যান আর্মি - আরি বাপরি বাপরি বাপ!  পুরো বিনোদনের ক্যাপসুল! ক্যাপসুলে কি নেই? তিন ঘন্টার মধ্যে জগত দর্শন! ওরে বাপরে মার কাকে বলে? অবশ্য শুধু মার বললে ভুল হবে। প্রেমের জোয়ার আছে, প্রেমের জোয়ারে দোহার ভেসে যাওয়া আছে। স্পাই ভার্স বলে কথা- কাজেই সুন্দরী নায়িকার স্বল্প বসনে হাঁটাচলার আবেদন আছে, মনে ঢেউ তোলা নাচন আছে। আর সর্বোপরি- গ্রিক গড হৃত্বিক রোশনের নাচ আছে! আর কি চাই? দীপিকা?  পুরো ছবিটাতেই তো হৃতিক রোশন আর হৃতিক রোশন! অবশ্য এন. টি. আর. তাঁর কামাল দেখিয়েছেন। হৃতিকের পাশে নাচার সময় চোখে পড়ে এমন মানুষ বলিউডে এখনও খুব কমই আছেন। এন. টি. আর তাদের একজন। ছবিতে হৃতিকের সাথে প্রায় সমান...

গৃহপ্রবেশ- ভালোবাসার ঘর দুয়ার

 শাশ্বত কর  গরম কোন পর্যায়ে সে তো আর বলা না বলার ধার ধরে না। ঘামে ঘামে বাসে ট্রামে সবাই টের পাচ্ছে। একটা কাজে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ঘণ্টা চারেকের অবসর পেয়ে গেলাম। অবসর বটে কিন্তু চাআআর ঘণ্টা এই তুমুল রোদে করি কী? সময় বদলেছে। এমন প্রখর দাবদাহে পথিক কি খুঁজতেন? খানিক গাছের ছায়া, তৃষ্ণার জল- এই তো!  আমার কাঁধের ব্যাগে জল, নাকের ডগায় মাস্ক, মাথায় কপালে রোদ্দুরের তেজে গলন্ত স্বেদ। মাথা চিড়বিড় করছে, পেতে ছুঁচো না হোক কেউ তো ডন দিচ্ছে। এই তুমুল আলোয় সত্যি সত্যি চোখে ঝিলমিল লেগে যাচেছ। সামনে অজস্র খাবারের দোকান, চায়ের দোকান। সেসব ছেড়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে খোলা মাঠ দেখে সময় কাটাব ভাবছিলাম। চোখে মুখে রোদেল হাওয়ার কঠিন চুম্বনএর ঠেলায় সইলো না! বেরিয়ে এলাম। দক্ষিণ কলকাতার ফুটপাথ। গাছের ছায়ার অভাব নেই, অভাব নেই রোদের দীর্ঘশ্বাসেরও! খানিক উদভ্রান্ত পায়চারির মধ্যেই মরূদ্যানের মত একটা সিনেমা হল। আর পায় কে? টিকেট উইন্ডোতে টিকিটের দাম দেখে খানিক আশ্বস্ত হলাম। এখনো ১১২ টাকায় সিনেমা দেখা যেতে পারে !এই দুপুর রোদে ১১২ টাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসার আরাম। এই ভয়ঙ্কর আশ্র...