বৃষ্টি এলো। তখন সকাল সাড়ে দশটা হবে । জানলার পাল্লা গুলো বন্ধ করলাম । জানলার পাশে বসেছি। গা ভর্তি আলসেমি। হঠাৎ জানালার বাইরে বকবকম। ঘষা কাচে তাকিয়ে দেখি কার্নিশে দুটো পায়রা এসে বসেছে । জবজবে ভিজে। ডানা থেকে জল ঝরছে। একজন বসে আছে চুপ করে। অন্যজন ওই অতটুকু জায়গায় ব্যস্ত হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। কত কথা তার। খানিক বাদে চলে গেল দুজনেই। জানলা খুলে দিলাম। বাইরের কদম গাছটা রোজই দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ পড়ে না। আজ তাকিয়ে দেখি নরম বলের মত কদম ফুটেছে। কাঠবেড়ালি কদমের ডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। ভিজে হাওয়া রীতিমতো থাপ্পড় কষিয়ে বলে গেল পাশাপাশি থাকো অথচ চোখ মেল না? বেড়াতে যাওয়া হলো না বলে মুষড়ে থাকো, অথচ একবারও বাইরে দেখ না। আরে এই শহরেও সব আছে। ব্যস্ততার বিলাসিতা ছেড়ে আবার তাকাতে শেখো। ছাদে অপরাজিতায় সাদা ফুল এসেছে, তুলসীর মঞ্জরিতে, সিমের কচি ফুলে প্রজাপতি এসে বসছে। প্রজাপতির মন খারাপ নেই। গ্রামের ফুলে বসবো, এখানে বসবো না এ সব ছেঁদো কথা বলে বলে মাথা কুটছে না । দেখো করবীতে আরেকটা রং এসেছে। ভাঙা বালতিতে শিকড় ছড়িয়েছে বলে অভিমানে ফুল ফোটাব না বলেনি।
পাশের ঘরে বাবু পড়ছে । আমার আজ কাজ নেই। ছাদে উঠে গেলাম। দুটো কাঠবিড়ালি দৌড়ে পালালো। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ওই এক টুকরো বাগানের কোনো একটা গাছের নিচে এসে বসেছিল বোধহয়। ট্যাঙ্কের উপর থেকে কাক চিৎকার করে উড়ে গেল। এবার চারপাশ শান্তই। বৃষ্টির বেগও পড়ন্ত। হাওয়া দিচ্ছে জোরে। চারপাশের গাছ অনেক কমে গেছে । নতুন ফ্ল্যাট বাড়ি হবে। খানিক দূরের একটা টাওয়ারে একটা বাজ কয়েক বছর ধরে তার পরিবার নিয়ে থাকে। টাওয়ারের চারপাশে সে পাক খাচ্ছে দেখলাম। ঘুঘু ডাকছে। আবার কোন পুরনো বাড়ির বাস্তুতে বাসা করল কে জানে! জামা কাপড় মেলার দড়িগুলোতে টপটপ করে জল ঝরছে । ওরই উপর দিয়ে সার বেঁধে লাল পিঁপড়ের দল হেঁটে যাচ্ছে। সকালে খবরে দেখেছি মানুষও বাসা ছেড়ে হেঁটে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। আজ আবার ঝড় হবে।
হাওয়া, বৃষ্টি, রোদ, ঝড়, জ্যোৎস্না, ফুল, পাখি -সব আসলে প্রকৃতির এক একটা রশি। এক প্রান্ত মনে বাঁধা আরেক প্রান্ত তাঁর হাতে। মন বেশিদিন বিপথে হাঁটলেই ওই রশি ধরে টান মারেন। প্রথমে আলতো, তারপর হ্যাঁচকা টান। তিনি তো বাবা-মা। টান পড়লে ঠিক এসে বসতে হয়। আর একটুখানি বসতে পেলেই মনের শান্তি প্রাণের আরাম।
- ©️ শাশ্বত কর
শময়িতা
24.10.2024
Comments
Post a Comment