Featured Post

বর্ষ শেষ, থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র আর সাধারণ জীবন

  শাশ্বত কর       বর্ষশেষের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীত তো পড়েছে। লাল সোয়েটার, মোজা, মাঙ্কিক্যাপে জুবুথুবু বৃদ্ধ সূর্য অস্ত যাচ্ছেন। যা...

Thursday, March 1, 2018

বসন্তোৎসব এবং বাহুমূলে বাবড়ি




লল সারাদিনের রঙের উৎসব। আগামীকালও কোথাও কোথাও রঙ খেলা চলবে। সে চলুক। বসন্ত এসে গেচে বলে কতা! ফুল ফুটুক চাই হুল ফুটুক, গুরু বসন্ত এয়ে গেচে! বসন্তের প্রকৃতি যখন ফুলে ফুলে রঙ মিশিয়ে মেতে থাকেন রঙের আনন্দে, তখন তাঁর বুদ্ধিমান সন্তানও যে রঙের খেলায় মাতবে সে তো স্বাভাবিক।

তিনি খেলবেন। তার জন্যে তিনদিন আগে থেকে আবহ তৈরি হবে। মোবাইলে মোবাইলে মেসেজ চালাচালি হবে।  লাগলো যে দোল, লাগলো যে দোল করে নানান গলায় কবিগুরুর চর্চা হবে! হোলিকার কুশপুত্তলিকায় ধানি পটকা বাঁধা হবে। কেত্তনের দলে হিন্দিগানের স্বরলিপি সাধা হবে। দোকানে দোকানে  নয়া বাবড়ি আসবে, কঙ্কাল ফেসের, ছুঁচো ফেসের নয়া মুখোশ আসবে। সব্বোপরি শান্তিনিকেতনের টিকিট মহার্ঘ্য হবে। জাতীয় পোশাক বার্মুডা যার, তার জন্যেও পাঞ্জাবী তৈরি হবে। বাসন্তি বেসে পলাশের ছোপ ছোপ পাঞ্জাবী, বগলে থুড়ি কাঁধে উড়ুক্কু ডিজাইন। কোন ক্যামেরায় কেমনি পোজে সেলফি উঠবে, কোন গালে কতটা পুরুত্বে কী রঙ লাগলে গুরুত্ব বাড়বে, সে নিয়ে গোলটেবিল বসে যাবে। বাড়িতে যেমন, তেমন খবরের চ্যানেলে চ্যানেলে। রূপোলি দিদিরা এসে টিপস দেবেন রঙের দিনের ইউনিক পোশাকের। সঞ্চালক হেঁচকি তুলে তুলে হেঁ হেঁ করবেন। তার পর ওম গুরবে নমহ বলিয়া পানসি চলবে গুরুধামের বসন্তোৎসব!

যাহারা যাইতে পারিলেন না, কুছ পরোয়া লাই, তাদের লেগে পাড়ায় পাড়ায় ইদানিং ভন্টুদারা আয়োজন করে ফেলেছেন লোকাল বসন্তোৎসব! সক্কাল সক্কাল হাতে ইস্টিলের থালায় দো চুটকি আবির। ঠা ঠা রাস্তায় হলদে শাড়ি নাচছে, ভন্টুদা লাইন সামলাচ্ছে, অটো আটকাচ্ছে- বটতলে দোল লেগেছে বস! খানিক না হয় বসিয়াই যান।

এমন নেত্যপরবের শেষেই আছে ডান্ডা হস্তে সেলফি তোলনান্তে বেশ করিয়া ফেসবুকে পোস্টন! লাইকস! লাইকস! লাইকস!

এরই মাঝে দুষ্টু চোখে ঢেউ উঠবে। চুনরওয়ালির প্রতি রঙ বর্ষাবে। সে 'আমি তখন নবম শ্রেণি'ই হোক চাই 'বহুদিনের শাড়ি'। রঙ চুঁইয়ে যাবে মনে। টসটস করে ঝরে পড়বে কাচের গেলাসে। ঢুকু ঢুকু শেষে ঢুলু ঢুলু চোখ শেষ পাতে ঠিক খুঁজে নেবে রোয়াকের কুকুর। তার ন্যাজ, মুখ কোনোটিই বাদ না রেখে কম্পলিট রেঙে দেবে। তারপর রঙিন জামায় হাতে হাতে ধরি ধরি গিট্টি বেঁধে গগনে গগনে প্রদর্শনীর লেগে মেলে দেবে। এই না হলে বস খেলা!

তা ছাড়া আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য 'কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে বিলা' মার্কা জাতীয় গানা তো আছেই! অতএব হাওয়া উঠছে উঠুক, হাওয়াকল ঘুরছে ঘুরুক।

কে কৃষ্ণ, কীসের দোল- প্রশ্ন গুলো সহজ আর উত্তরও অজানা! কাজেই এ সব আনকমন প্রশ্ন বরং লুকিয়ে থাক। চাকা তো ঘুরছেই। বলা যায় না, কোনো দিন আবার কেউ এ সব জিজ্ঞেস করতেও পারে। সেই আলেক মানুষের জন্যে প্রশ্নগুলো বরং তোলাই থাক। এখন বরং গুরু রাত হয়েচে, হালকা করে হোলির মিউজিক দিয়ে ঘুমের তরলে ভাসা যাক।



শাশ্বত কর/ শময়িতা
দোল, ২০১৮

2 comments: